আবারও ভারত-নেপাল সীমান্তে বাড়ল উত্তেজনা। বিহার লাগোয়া সীমান্তে ভারতীয়দের বেধড়ক মারধর করে নেপালের সশস্ত্র বাহিনী। ঘটনায় আহত হয়েছেন এক ভারতীয় দম্পতি। পরে ক্ষুব্ধ ভারতীয়দের সীমান্তে জমায়েত করলে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলিও চালিয়েছে নেপালের বাহিনী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেল চারটে নাগাদ পশুর খাদ্য জোগাড় করতে সীমান্ত পেরিয়ে নেপালের ভূখণ্ডের নারকাটিয়ায় ঢুকে পড়েন সীমা দেবী নামে এক মহিলা। তাঁর বাড়ি পূর্ব চম্পারণ জেলার গোড়াসাহান ব্লকের ঝারোখারের খারশালওয়ার গ্রামে। মহিলার সঙ্গে ছিলেন মঞ্জু দেবী ও কুন্দন কুমার। গোড়াসাহানের বাসিন্দা এবং জেডিইউয়ের রাজ্য পরিষদের সদস্য রামপুকার সিনহা বলেন, ‘ওই মহিলার সঙ্গে বাজে আচরণ করে নেপালের সশস্ত্র বাহিনী এবং তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তারপরই উত্তেজনা তৈরি হয়।’
সেই ঘটনা ছড়িয়ে পড়তেই ঘটনাস্থলে যান সীমা দেবীর স্বামী রবীন্দ্র প্রসাদ। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী'কে মারধরের প্রতিবাদ করলে ওরা আমায় মারধর করে। তাদের চৌকিতে নিয়ে যায়। তার আগে আমরা স্ত্রী'কে ছেড়ে দেয়।’ তবে মাথায় চোট লেগেছে সীমা দেবীর। ফোনে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-কে তিনি বলেন, ‘প্রথমে ওরা কুন্দন ও অন্যান্য গ্রামবাসীদের মারধর করে। ওদের বাঁচাতে গেলে আমার পিছনে পড়ে যায়।’
সন্ধ্যা ছ'টা নাগাদ সীমান্তে এলাকায় আরও উত্তেজনা বাড়ে। মারধরের প্রতিবাদে সীমান্তে খারসাওয়ালা এবং আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা জড়ো হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শূন্যে গুলি চালায় নেপালের সশস্ত্র বাহিনী। ভারতের দিকে প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী কিনতে আসা এক নেপালি রক্ষীকে পাকড়াও করেন গ্রামবাসীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন শিকারাহানার মহকুমা শাসক জ্ঞানপ্রকাশ এবং এসডিপিও। পৌঁছান সশস্ত্র সীমা বলের আধিকারিক এবং জওয়ানরা। তারপর নিয়ন্ত্রণে আসে পরিস্থিতি।
রামপুকার সিনহা জানান, রাত সাড়ে ১১ টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। দু'তরফ থেকেই রবীন্দ্র প্রসাদ এবং নেপালের রক্ষীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন সশস্ত্র সীমা বলের ২০ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার তপন কুমার দাস। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, ওই মহিলাকে ফেরত চলে যাওয়ার কথা বলতে কাস্তে দিয়ে নেপালের সুরক্ষা বাহিনীর এক জওয়ানের উপর হামলা চালিয়েছেন।’
উল্লেখ্য, ছ'সপ্তাহে এই নিয়ে তৃতীয় বার সীমান্তে এরকম উত্তেজনা তৈরি হল। গত ১২ জুন একইভাবে বিহারের সীতামাঢ়ি জেলার সীমান্তে ভারতীয়দের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল নেপালের সুরক্ষা বাহিনী। সেই ঘটনায় এক ভারতীয়ের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন চারজন। স্থানীয়রা জানিয়েছিলেন, পাঁচজন স্থানীয় মাঠে কাজ করছিলেন। সেই সময় তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল বিকেশ কুমার রাইয়ের (২৫)। এরপর গত ১৯ জুলাই কিষানগঞ্জ জেলার তেরহাগাছ ব্লকের ফতেহপুরের সীমান্তে ভারতীয়দের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল নেপাল পুলিশ। তিনজনের দিকে তাক করে গুলি ছোড়া হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন একজন।