শিশির গুপ্ত
সংযম দেখাচ্ছে ভারত। কিন্তু প্রত্যুত্তরে আরও সুর চড়াচ্ছে নেপাল। রীতিমত শনিবার বিশেষ অধিবেশন ডেকে নয়া ম্যাপের জন্য ভোটিং প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছে কেপি ওলি শর্মার সরকার। শনিবার-যেটি ছুটির দিন নেপালে ,সেদিন বিশেষ অধিবেশন ডেকে ভারতকে বার্তা দিতে চাইছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী, এমনই মনে করা হচ্ছে।
ভারতের তিনটি অঞ্চল লিমপিয়াধুরা, লিপুলেখ ও কালাপানিকে নিজেদের অঞ্চল হিসাবে দেখাবে নেপাল নতুন ম্যাপে। এই সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ হয়েছে সংসদের নিম্ন কক্ষে। সব দলই একে সমর্থন করেছে কিন্তু বিল পাশের আগে ৭২ ঘণ্টা দিতে হয় যদি কেউ সংশোধনী দিতে চান, তার জন্য। এখনও পর্যন্ত কেউ কোনও সংশোধনী দেয়নি বলেই জানা গিয়েছে। এই ৭২ ঘণ্টার মেয়াদকাল শেষ হচ্ছে শুক্রবার বিকালে। তারপর কালক্ষেপ না করে শনিবারেই হবে আনুষ্ঠানিক ভোটিং।
এক ভারতীয় আধিকারিক জানিয়েছেন যে আগামী সপ্তাহ অবধিও অপেক্ষা করছেন না ওলি, এতেই তাঁর অভিপ্রায় স্পষ্ট। দীর্ঘদিন ধরেই দলের মধ্যে কোণঠাসা ওলি। ভারত মানস সরোবর যাত্রার জন্য লিপুলেখ পাস দিয়ে নয়া রাস্তা চালু করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি নয়া ম্যাপ প্রকাশ করেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয়তাবাদী ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ভারত-বিরোধী সেন্টিমেন্টকে উস্কে নিজের জায়গাটি শক্ত করে নিতে চাইছেন তিনি।
ভারত ও চিনের মধ্যে যখন সীমান্তে সমস্যা তুঙ্গে উঠেছে, তখন হঠাত্ নেপালের এই হেন আচরণের মধ্যে অনেকেই বেজিংয়ের কমিউনিস্ট পার্টির হাত দেখছেন। এপ্রিল মাসে দল বিরোধী আইনে পরিবর্তনের জন্য দুটি অধ্যাদেশ আনে নেপাল সরকার। পাঁচ দিনের মধ্যে তা চিনের চাপে বাতিল হয়ে যায়। শি জিনপিংয়ের দূতরা ওলিকে বলেন যে তিনি যেন কমিউনিস্ট পার্টিকে ভেঙে যেতে না দেন।
ভারত এর আগে এই নেপালের নয়া ম্যাপকে অনৈতিক কাজ বলে অভিহিত করেছে। মোদী সরকারের মতে এই মানচিত্র ঐতিহাসিক তথ্য, প্রমাণ ইত্যাদি ছাড়াই প্রস্তুত করা হয়েছে। এরকম কৃ্ত্তিম ভাবে সীমান্ত দাবি বাড়াতে নেপালকে মানা করেছিল ভারত।
বুধবার নেপালের সংসদে ওলি অবশ্য বলেন যে তারা দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় প্রস্তুত ভারতের সঙ্গে বিভেদ মিটিয়ে ফেলার জন্য। একই সঙ্গে যোগীর তিব্বত হুঁশিয়ারি নিয়েও নিজের আপত্তি জানান নেপালের প্রধানমন্ত্রী।
পুরো বিষয়টির ওপর নজর রেখেছে ভারত। তবে নয়াদিল্লির কথায়, একবার যদি সংসদে পাশই হয়ে যায়, তাহলে আর আলোচনার কী থাকল। তবে প্রকাশ্যে তেমন কিছু বলবে না ভারত, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। নেপাল সরকারকে কিছুটা উপেক্ষা করে সরাসরি নেপালি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে পারে ভারত, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার নেপাল নিয়ে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তবকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন যে দুই দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশ সহযোগিতা করছে একে অপরের সঙ্গে। কিন্তু নয়া ম্যাপ নিয়ে তিনি কিছু বলেননি, শুধু এটা ছাড়া যে এই নিয়ে ভারত আগেই অবস্থান স্পষ্ট করেছে।