দু'দেশের সম্পর্কে আগেই ফাটল ধরেছিল। এবার সেই ফাটল আরও চওড়া হল। সোমবার নেপাল সরকার জানাল, লিপুলেখ এবং কালাপানিকে নিজেদের ভূ-খণ্ডের অংশ দেখিয়ে নয়া একটি মানচিত্র প্রকাশ করা হবে। যে দুটি এলাকা নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিবাদ রয়েছে নেপালের।
প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পৌরহিত্যে মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে লিমপিয়াধুর, লিপুলেখ এবং কালাপানিকে নেপালের অংশ হিসেবে দেখানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরে একটি টুইটবার্তায় সেদেশের বিদেশমন্ত্রী প্রদীপ জ্ঞাওয়ালি জানান, ‘লিমপিয়াধুর, লিপুলেখ এবং কালাপানি’-সহ সাতটি প্রদেশ, ৭৭ টি জেলা এবং ৭৫৩ টি স্থানীয় প্রশাসনিক বিভাগ নিয়ে নেপালের একটি নয়া মানচিত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই ভূমি পরিচালন মন্ত্রক নয়া মানচিত্র প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। একধাপ এগিয়ে সাংস্কৃতিক এবং পর্যটন মন্ত্রী যোগেশ ভট্টরাই ওলিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মন্ত্রিগোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত ‘ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি ভারত। তবে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে আগেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল, লিপুলেখ ‘পুরোপুরি ভারতীয় ভূ-খণ্ডের অন্তর্গত’। চিন সীমান্ত পর্যন্ত একটি রাস্তা তৈরি নিয়ে ইতিমধ্যেই সেই এলাকা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
সম্প্রতি লিপুলেখ পাস পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তার উদ্বোধন করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। কৈলাস-মানস সরোবরে যে তীর্থযাত্রীরা যান, তাঁদের যাতে সিকিম এবং নেপালের উচ্চ এলাকার রুট ব্যবহার না করতে হয়, সে কথা মাথায় রেখে এই রাস্তা তৈরি হয়েছে।
তবে সেই রাস্তা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল ভারতের একসময়ের ‘কাছের বন্ধু’ রাষ্ট্র। কাঠমান্ডুর দাবি, নয়া রাস্তাটি ‘নেপালের ভূ-খণ্ডের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে’। তা নিয়ে গত সপ্তাহে ভারতীয় দূতকে ডেকে প্রতিবাদও জানায় নেপাল। তবে তার আগে থেকেই দু'দেশের মধ্যে সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়ে চাপানউতোর চলছে। জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ধরে ভারতের যে নয়া মানচিত্র প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে কালাপানিকে উত্তরাখণ্ডের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছিল। তা নিয়েও অসন্তুষ্ট ছিল নেপাল।
এরইমধ্যে ভারতীয় সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানের একটি মন্তব্যে কাঠমান্ডুর ক্ষোভ বাড়ে। গত সপ্তাহে নারাভানে দাবি করেছিলেন, ‘অন্য কারোর' প্রশয়ে নেপাল প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কারোর নাম না করলেও ভারতীয় সেনা প্রধানের ইঙ্গিতটা যে চিনের দিকেই ছিল, তা কার্যত স্পষ্ট। যিনি আবার নেপালের সেনার সাম্মানিক প্রধানও।
সেই ক্ষোভের মধ্যেই করোনা মোকাবিলায় সহযোগিতার অঙ্গ হিসেবে ৩০,০০০ টেস্টের জন্য মেডিক্যাল লজিস্টিক এবং কিট পাঠানোয় নয়াদিল্লিকে ধন্যবাদ জানান নেপালের বিদেশমন্ত্রী। সেই ঘটনার মেরেকেটে একদিন পরই নেপালের সিদ্ধান্তে নয়া ইঙ্গিত পাচ্ছেন কূটনীতিবিদরা।
নয়াদিল্লি অবশ্য জানিয়েছে, সীমান্ত সংক্রান্ত এরকম বিতর্ক কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে মেটাতে পারে দু'দেশ। তবে করোনা সংকট মোকাবিলার পরই সেরকম আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে ভারত।