আগেই গ্রেফতার হয়েছেন রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায়। এবার আরও বিপাক পড়তে পারেন বাংলাদেশের হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, চট্টগ্রাম আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস সহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন এক ব্যবসায়ী। মামলাকারীর নাম এনামুল হল। তাঁর দাবি, গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে এসেছিলেন জমির রেজিস্ট্রেশন করানোর জন্যে। সেই সময়ই নাকি তাঁকে মারধর করেন চিন্ময় প্রভুর অনুগামীরা। এই আবহে তিনি গুরুতর ভাবে জখম হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি হন। (আরও পড়ুন: ভারতীয় হাইকমিশন অভিযানে ছাত্রদল-যুবদল, যান চলাচল বন্ধ ঢাকার নয়াপল্টনে)
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে এবার পথে কুণাল ঘোষ, বললেন...
বর্তমানে চিন্ময় প্রভু জেলে আছেন। তাঁর জামিনের মামলার পরবর্তী শুনানি হবে নয়া বছরে। এদিকে চিন্ময় প্রভু যাতে কোনও রকম আইনি সহায়তা না পান, তার জন্যে ক্রমাগত হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে চট্টগ্রামের আইনজীবীদের একটা অংশ। এমনকী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের হয়ে কোনও আইনজীবী যদি আদালতে পেশ থাকেন, তাহলে সেই আইনজীবীকে গণপিটুনি দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই আবহে চিন্ময় প্রভুর আগের জামিন শুনানিতে কোনও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। (আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ভারতের জেল ভালো! ওপারের 'অত্যাচারে' এপারে ১০ হিন্দু)
আরও পড়ুন: নাম উঠল সনিয়া গান্ধীর, কংগ্রেস-সোরোস যোগ নিয়ে আরও বিস্ফোরক বিজেপি
প্রসঙ্গত, গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছিল বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সেই সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুও। সেই সমাবেশেই নাকি তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছিলেন। এই অভিযোগেই চট্টগ্রামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান। গত ৩১ অক্টোবর চিন্ময় দাস-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সেই নেতা। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে গ্রেফতার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। এরপর তাঁকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে বাইরে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে জড়ো হয়েছিলেন চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানাতে। সেই জনতার ওপর নির্বিচারে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এই সংঘর্ষে এক আইনজীবী খুন হন। সেই খুনের ঘটনায় ১০ জন হিন্দুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে অভিযোগ উঠছে, ইচ্ছে করে সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করা হচ্ছে। এদিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের হয়ে কোনও আইনজীবী যাতে মামলা না লড়েন, তার জন্যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। (আরও পড়ুন: এবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের হয়ে সরব ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশন, ইউনুসকে লেখা হল চিঠি)
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে হিন্দু মহিলা খুনে সামনে এল ‘চিন্ময়-যোগ’, সরব এপার বাংলার নেতারা
এদিকে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত চন্দন দাসকে সম্প্রতি গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চন্দন দাসই নাকি কিরিচ হাতে আইনজীবীকে কুপিয়েছিলেন। সেই সময় তার পরনে ছিল কমলা রঙের গেঞ্জি আর কালো প্যান্ট। জানা গিয়েছে, গতরাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেল স্টেশনের কাছ থেকে চন্দনকে গ্রেফতার করা হয়। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পথে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ দাবি করেছে, ঘটনার দিন ধারালো অস্ত্র দিয়ে আইনজীবী সাইফুলকে কোপান ওম দাশ, চন্দন ও রনব। বাকি আরও অনেকে সাইফুলকে মারতে থাকেন। পুলিশ দাবি করছে, তারা নাকি খুনের ভিডিয়ো হাতে পেয়েছে। সেই ভিডিয়ো ফুটেজ দেশে শনাক্ত করা হয়েছে ধৃতদের। সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন সেই আইনজীবীকে মারছে। এর মধ্যে দু'জন হেলমেট পরে থাকা ব্যক্তি কুপিয়েছে সাইফুলকে। (আরও পড়ুন: 'পায়খানা পরিষ্কার করায় কৃতিত্ব…', ৪ দিনে কলকাতা দখলের 'হুংকারের' জবাব তথাগতর)
এর আগে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল - রুমিত দাস, সুমিত দাস, গগন দাস, নয়ন দাস, বিশাল দাস, আমান দাস ও মনু মেথরকে। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুগামী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মোট তিনটি পৃথক মামলা করা হয়েছে। মোট ৭৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেই সব মামলায়। এছাড়াও মামলায় অভিযুক্ত আরও ১ হাজার ৩০০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। সেদিনের সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩৭ জন।