যখন মনে হচ্ছিল অনেকটাই ধরে এসেছে করোনা, কিছু দিনের মধ্যে টিকা এলেই দুঃস্বপ্নের সমাপতন হবে, আচমকাই টুইস্ট। ব্রিটেনে করোনার একটি নয়া প্রজাতির সন্ধান মিলেছে যেটা ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এর জেরে ইতিমধ্যেই ব্রিটেন থেকে ফ্লাইট অস্থায়ী ভাবে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ফের করোনা বাড়তে পারে, এই চিন্তায় বিএসএই সূচক সোমবার হাজার পয়েন্টের বেশি পড়েছে।
ব্রিটেন সরকারের মতে, করোনাভাইরাস ক্রমশ মিউটেট করেছে। সেপ্টেম্বরে এই করোনা প্রজাতির প্রথম খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। এখন এই প্রজাতির করোনাই ছেয়ে গিয়েছে ব্রিটেনে। ফলেই বেড়েছে চিন্তা।
বিবিসিকে ব্রিটেনের কোভিড-১৯ টিমের সদস্য প্রফেসর নিক লোমান বলেন যে গবেষণাগারে বিস্তারিত তথ্য এই প্রজাতি নিয়ে এখনও হয়নি, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কোনও রকম ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়।
বরিস জনসন জানিয়েছেন যে এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৭০ শতাংশ অবধি দ্রুত ছড়ায় এই ভাইরাসটি। এর ফলে অতিমারীর প্রভাব বাড়ার সম্ভাবনাও আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এখনও নির্দিষ্ট করে এই ভাইরাসটি কতটা বেশি সংক্রামক তার তথ্য আসেনি। এই মোটের ওপর হিসেবটি দিয়েছেন লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের এরিক ভলজ। তবে কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে এখনই নির্দিষ্ট করে বলা উচিত নয় যে সংক্রমণের হার বেড়েছে এই ভাইরাসের জেরে।
ইউনাইটেড কিংডমের মধ্যে মূলত লন্ডন ও পূর্ব ইংল্যান্ডে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া ও নেডারল্যান্ডসেও এই বিশেষ প্রজাতির করোনাভাইরাস দেখা গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। একই রকম প্রজাতির কিন্তু সংযোগহীন ভাইরাসের খোঁজ মিলেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়।
এর আগেও করোনা ভাইরাস মিউটেট করেছে। এই বিশেষ মিউটিশনের ক্ষেত্রে ১৭টি পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। মানুষের শরীরের চাবিকাঠি ভাইরাস যেখান দিয়ে পায়, সেই স্পাইক প্রোটিনের চরিত্রে বদল হয়েছে। এছাড়াও আরেকটি বিশেষ পরিবর্তন দেখা দিয়েছে ভাইরাসের চরিত্রে, যেটি এটিকে দ্বিগুণ বেশি সংক্রামক করে তোলে।
খুব সম্ভবত কোনও মানুষ যার শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দুর্বল ছিল, সেটিকেই মিউটেট করার আঁতুরঘর হিসাবে ব্যবহার করেছে ভাইরাসটি। তবে এই প্রজাতির ঘাতক ক্ষমতা বেশি, এমন কিছু এখনও জানা যায়নি।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে যে সব করোনা টিকা তৈরি হচ্ছে সেগুলি কি আদৌ এই নয়া প্রজাতির বিরুদ্ধে কার্যকরী হবে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে আপাতত ভ্যাকসিন পুরোপুরি কার্যকর হবে। জানা গিয়েছে যে ভ্যাকসিনগুলি ভাইরাসের প্রোটিন স্পাইকটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ভাইরাসের বিভিন্ন অংশকে আক্রমণ করে ভ্যাকসিনের দ্বারা তৈরি হওয়া প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তাই স্পাইকটি মিউটেট করলেও ভ্যাকসিন কার্যকরী হওয়া উচিত। কিন্তু ভাইরাস বারবার করে চরিত্র বদলালে ভ্যাকসিনটি কার্যকরী নাও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে সেই পথে গুটিগুটি পা দিয়েছে ভাইরাসটি। এটাই সবচেয়ে বেশি চিন্তায় রাখছে সবাইকে।