নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে মহাকুম্ভগামী রেলযাত্রীদের ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৮ জনের। মৃতদের মধ্যে অন্তত ২ জন শিশু। সেই এক শিশুর নাম সুরুচি শাহ। আর মেয়েকে হারিয়ে দিশাহারা মনোজ শাহ। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ অনেক দেরিতে পৌঁছায় ঘটনাস্থলে। তিনি বলেন, 'আমার মেয়েটা বেঁচে যেতে পারত। কিন্তু বহু মানুষ তাকে মাড়িয়ে চলে যায়।' (আরও পড়ুন: একজন পা পিছলে পড়ার জেরেই পদপিষ্ট হয়ে মৃত ১৮? নয়াদিল্লি কাণ্ডে রেলের যুক্তি…)
আরও পড়ুন: সীমান্তের ওপারে আটক ভারতীয় নারী, পরে পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে দেয় বিজিবি
তিনি বলেন, 'আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি আমার ছোট্ট মেয়েকে হারিয়েছি। আমার স্ত্রীও ভেঙে পড়েছেন। তারা (হাসপাতালের প্রশাসন) আমাকে ভেতরেও ঢুকতে দিচ্ছে না। আমার স্ত্রীর ভাই আমাকে ফোন করে ডাকেন। আমার স্ত্রী, আমার মেয়ে এবং নিজের মা-বাবাকে নিয়ে মহাকুম্ভে যাচ্ছিলেন তিনি। তিনি আমাকে ফোন করে বলেছিলেন - এখানে ছোটাছুটি শুরু হয়েছে, সবাই আলাদা হয়ে গিয়েছে। প্লিজ বাঁচাও। এই শুনে আমি বসে পড়ি মাটিতে। পরে তাঁকে ফোন করে আমি বলি আমার মেয়েকে খুঁজতে। বহুক্ষণ পর তাঁরা একে অপরকে খুঁজে পান। আমার মেয়ে মারা গিয়েছে। সুরুচি আমার একমাত্র মেয়ে ছিল। এখন আমি কী করব? সে মাত্র ক্লাস ৫-এ পড়ত। আমার স্ত্রী তাঁর মা-বাবাকে হারিয়েছেন। তাঁদের কী দোষ ছিল?' (আরও পড়ুন: '১৩তম বাচ্চার' জন্ম নিয়ে ইলনের প্রথম প্রতিক্রিয়া, 'মাস্কের সন্তানের মা' বললেন…)
এদিকে ঘটনার পরে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি পোস্ট করে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ঘোষণা করেন যে বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। যদিও মহাকুম্ভগামী রেলযাত্রীদের ভিড় সামলাতে কেন আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি, কেন পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে গেল, তা নিয়ে কোনও বাক্য ব্যয় করেননি রেলমন্ত্রী। এদিকে রেলের তরফ থেকে এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ ট্রেনে করে আহতদের ঘটনাস্থল থেকে সরানো হয়েছে। (আরও পড়ুন: 'আধঘণ্টা পরে পাই বোনকে, ততক্ষণে ও মরে গিয়েছে... রেললাইন পার করে দেহ নিয়ে যাই')
আরও পড়ুন: পদপিষ্ট কাণ্ডে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে মুখ খুললেন প্রত্যক্ষদর্শী IAF সারজেন্ট
রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনের ১৪ এবং ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এই পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। জানা গিয়েছে, প্রয়াগরাজের দু'টি ট্রেন বাতিল হওয়ার পরে এই পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ রেলযাত্রীদের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়। যার জেরে পদপিষ্ট হয়ে এখনও পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়। আরও অনেক রেলযাত্রী আহত হয়েছেন। এর পরই রেল মন্ত্রকের তরফ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে রেলওয়ে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার কেপিএস মালহোত্রা জানান, বিলম্বিত ট্রেনের জেরে স্টেশনে পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তিনি বলেন, '১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময় প্ল্যাটফর্মে অনেক লোক দাঁড়িয়ে ছিলেন। এদিকে স্বতন্ত্র সেনানি এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস বিলম্বির হয়েছিল। এই ট্রেনগুলি ১২ এবং ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ছিল। ১৫০০ জেনারেল টিকিট বিক্রি হয়েছিল। এর জেরে প্ল্যাটফর্মে ভিড় বেড়ে গিয়েছিল।'