শবরীমালা আয়াপ্পন মন্দিরের বিগ্রহ থেকে সোনা চুরি যাওয়ার অভিযোগকে ঘিরে উত্তপ্ত কেরলের রাজনীতি। অবশেষে উধাও হয়ে যাওয়া সোনার হদিশ মিলল। বিগ্রহ মেরামতের পর বাড়তি যে সোনা ছিল, সেগুলি এক দুঃস্থ তরুণীর বিয়ের কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন আয়াপ্পন মন্দিরের ‘স্পনসর’ উন্নিকৃষ্ণন পট্টি। এমনটাই দাবি করা হয়েছে এনডিটিভি-র প্রতিবেদনে। ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে বিগ্রহের বাড়তি সোনা বিয়েতে ব্যবহারের জন্য ত্রাবাঙ্কোর দেবস্বম বোর্ড (টিডিবি)-এর কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠিও লিখেছিলেন উন্নিকৃষ্ণন।
এনডিটিভি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোনা চুরির তদন্তে আদালতের হাতে যে রিপোর্ট এসেছে, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে বিগ্রহের সোনা বিয়ের কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন উন্নিকৃষ্ণন পট্টি। চিঠিতে তিনি লেখেন, 'আমি জানাতে চাই যে শবরীমালার গর্ভগৃহের বিগ্রহ মেরামতের পরেও কিছু সোনা আমার হাতে রয়েছে। আমি এই সোনা এমন একজন দুঃস্থ তরুণীর বিয়ের জন্য ব্যবহার করতে চাই যার টিবিডি-র প্রকৃত সহায়তার প্রয়োজন। এই বিষয়ে আপনাদের মতামত অনেক গুরুত্বপূর্ণ।' এরপর টিডিবি-কে লেখা উন্নিকৃষ্ণনের ওই চিঠির ভিত্তিতে ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর দেবস্বমের সম্পাদক ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠান, বিগ্রহের বাড়তি সোনা দিয়ে কী করা উচিত।
আরও পড়ুন-'১৫ দিনের মধ্যে মিরিকে সেতু!' বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী, বড় ঘোষণা
২০১৯ সালে শবরীমালা মন্দিরের বিগ্রহর উপর সোনার প্রলেপযুক্ত তামার প্লেট মেরামত এবং নতুন করে সোনার প্রলেপ দেওয়ার জন্য সেগুলি সরানো হয়। ঘটনার পরে প্রায় একমাস পরে প্লেটগুলিকে চেন্নাইয়ের ‘স্মার্ট ক্রিয়েশন’-এ (গোল্ড প্ল্যাটিংয়ের জন্য খ্যাত সংস্থা) নিয়ে যাওয়া হয়। কোম্পানিকে প্লেটগুলি দেওয়ার সময়ে ওজন ছিল মোট ৪২.৮ কেজি। পরে সেটা কমে দাঁড়ায় ৩৮.২৫৮ কেজি। কীভাবে এতটা ওজন কমল তা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। তা সত্ত্বেও, টিডিবি চলতি বছর উন্নিকৃষ্ণন পট্টিকে একটি সোনার প্রলেপ সংক্রান্ত দায়িত্ব দিয়েছে। শবরীমালার সোনা চুরি যাওয়ার অভিযোগকে ঘিরে এই মুহূর্তে উত্তাল কেরল, যার আঁচ এসে পড়ছে জাতীয় রাজনীতিতেও। বুধবার কেরল হাইকোর্টের মতে, এই ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বুধবার বিচারপতি রাজা বিজয়রাঘবন ভি এবং বিচারপতি কেভি জয়কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, দ্রুত এই বিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এর আগে শবরীমালা আয়াপ্পা মন্দিরের প্রাক্তন সহকারি এবং সোনার প্রলেপ কাজের পৃষ্ঠপোষক উন্নিকৃষ্ণন পট্টির বয়ান রেকর্ড করা হয়।তিরুবনন্তপুরমের সদর দফতরে ত্রাভাঙ্কোর দেবস্বম বোর্ড (টিডিবি) ভিজিল্যান্স প্রায় টানা তিনঘণ্টা ধরে উন্নিকৃষ্ণন পট্টিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
আরও পড়ুন-'১৫ দিনের মধ্যে মিরিকে সেতু!' বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী, বড় ঘোষণা
এরপরেই সোমবার শবরীমালার দ্বারপালকের ওজন কমে যাওয়ার অভিযোগের তদন্তে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনের কথা ঘোষণা করে কেরল হাইকোর্ট। বিচারপতি রাজা বিজয়রাঘবন ভি এবং বিচারপতি কে ভি জয়কুমরাকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ জানায়, সিটের নেতৃত্বে থাকবেন পুলিশ সুপার এস শ্রীধরণ। এর আগে হাইকোর্টের নির্দেশে ত্রিবাঙ্কুর দেবস্থানম বোর্ড ভিজিলেন্স টিম প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেয়। অন্যদিকে, এই ঘটনায় কেরলের বাম সরকারের জবাব চেয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। তিনি বলেন, 'আমি মনে করি কেরলের সবাই বুঝতে পারছেন যে যা ঘটছে তাতে সত্যিই কিছু সন্দেহজনক বিষয় রয়েছে। অনেক কিলো সোনা পাচারের অভিযোগ। এটি অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। আমি খুশি যে এখন হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে সিট তদন্ত শুরু করেছে। যা ঘটেছে তাতে আমার মনে হচ্ছে যে কিছু চমকপ্রদ বিষয় রয়েছে.. যা বর্তমান সরকারের অধীনে কয়েক বছর ধরে চলে আসছে। আমি মনে করি এর জবাব দেওয়া প্রয়োজন।'