ভারতের নতুন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান সিপি রাধাকৃষ্ণন মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলির সাথে বৈঠক করেছেন। উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে এটা তাঁর প্রথম বৈঠক ছিল। তিনি সংসদ অধিবেশন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সাংসদদের সাহায্য চেয়েছেন এই বৈঠকে। একইসঙ্গে 'লক্ষ্মণরেখা' অতিক্রম করা উচিত নয় বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলিকে। উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিরোধী জোটের ভারতের প্রার্থী বি সুদর্শন রেড্ডিকে পরাজিত করেছিলেন সিপি রাধাকৃষ্ণন। পরবর্তী শীতকালীন অধিবেশনে সংসদের উচ্চকক্ষে তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথমবারের মতো দায়িত্ব সামলাবেন।
এই আবহে মঙ্গলবারের বৈঠকে রাজ্যসভার স্পিকার বলেন, সাংসদদের কথা বলার অধিকার আছে, কিন্তু আমাদের 'লক্ষ্মণরেখা' অতিক্রম করা উচিত নয়। তিনি বলেন, 'মতভেদ ছাড়া গণতন্ত্র হতে পারে না।' সংসদ ভবনে বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রথম আনুষ্ঠানিক আলাপচারিতায় রাজ্যসভার চেয়ারম্যান রাধাকৃষ্ণন উচ্চকক্ষের কাজকর্মের উন্নতির জন্য তাঁদের মতামত ও পরামর্শ শোনেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা, রাজ্যসভায় কংগ্রেসের ডেপুটি লিডার প্রমোদ তিওয়ারি, আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী এল মুরুগান। তবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও জেডিএস নেতা এইচডি দেবগৌড়া এবং রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে অসুস্থতার কারণে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি।
বৈঠকে কংগ্রেসের চিফ হুইপ জয়রাম রমেশ উপস্থিত ছিলেন। বিরোধীদের উত্থাপিত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান তিনি। সূত্রের খবর, রমেশ রাধাকৃষ্ণনকে অনুরোধ করেছিলেন যে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি, তা নিয়ে যেন আলোচনার অনুমতি দেওয়া হয় রাজ্যসভায়। সূত্রের খবর, জাতীয় নিরাপত্তা, বিশেষ করে চিন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রাজ্যসভায় আলোচনার দাবি জানান কংগ্রেস নেতা। কংগ্রেস নেতা আরও বলেছিলেন যে সমস্ত বিল স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো উচিত, তা নিয়েও আলোচনা করা হোক রাজ্যসভায়। তিনি অভিযোগ জানান, সম্প্রতি জন বিশ্বাস বিল এবং দেউলিয়া কোড বিল নিয়ে গঠিত দুটি সিলেক্ট কমিটিতে রাজ্যসভার সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব নেই।
বৈঠকের পরে কংগ্রেসের ডেপুটি লিডার প্রমোদ তিওয়ারি বলেন, উপরাষ্ট্রপতি একটি আনুষ্ঠানিক পরিচয় সভা করেন। এটি একটি নতুন ঐতিহ্য। বৈঠকে তিনি সবার কথা শুনেছেন। তিনি বলেন, 'সংসদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিরোধীরা চায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হোক, আমাদের কথা বলার সুযোগ দেওয়া হোক। তিনি (চেয়ারম্যান) আশ্বাস দিয়েছেন যে তিনি সমস্ত পরামর্শ খতিয়ে দেখবেন এবং সংসদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার চেষ্টা করবেন।' ডিএমকে-র তিরুচি শিবা বলেছেন, রাধাকৃষ্ণন আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তিনি রাজ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেবেন। শিব বলেন, 'আমরা আশা করি সংসদের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য তিনি উভয় পক্ষকে (ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী) সমান আচরণ করতে বলবেন। আমরা পরিষ্কার করে দিয়েছি যে আমরা কার্যক্রম ব্যাহত করতে চাই না। আমাদের নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের বেশ কয়েকটি বিষয় সংসদের নজরে আনতে হবে।'
সিপিএমের জন ব্রিটাস বলেছেন, সরকারের উচিত বিরোধীদের ইস্যু উত্থাপনের অনুমতি দেওয়া। তিনি বলেন, বিরোধীদের দাবি নিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ প্রস্তাব ও স্বল্প মেয়াদী আলোচনার অনুমতি দিতে হবে। বিরোধীদের বিপুল সংখ্যক প্রশ্ন প্রত্যাখ্যান করা এবং উপযুক্ত উত্তর না দেওয়ার বিষয়টিও উত্থাপন করেছিলেন ব্রিটাস। শিবসেনা নেতা মিলিন্দ দেওরা জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের সভাপতি একনাথ শিন্ডের পক্ষ থেকে তিনি নয়াদিল্লিতে রাজ্যসভার নেতাদের বৈঠকে নবনির্বাচিত উপ-রাষ্ট্রপতিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দেওরা বলেন, 'আমি তাকে আমার দলের পূর্ণ সমর্থন এবং সংসদীয় আচরণের সর্বোচ্চ মানদণ্ডের আশ্বাস দিয়েছি।'