নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ডের সাজায় ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতির অনুমোদন আসতেই ঘুম উড়েছে পরিবারের। এই আবহে এবার মুখ খুললেন নিমিশা প্রিয়ার স্বামী। ভারত সরকার 'যথাসম্ভব সাহায্যের' আশ্বাস দিয়েছে। এমনকী ইরানও নিমিশা ইস্যুতে সাহায্যের চেষ্টার বার্তা দিয়েছে। এই আবহে নিমিশার স্বামী বললেন, 'প্রেসিডেন্টের নির্দেশের পর থেকে আমাদের চোখে ঘুম নেই। আমরা প্রার্থনা করছি। আমাদের জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্টের নির্দেশের এক মাসের মধ্যেই ফাঁসির সাজা কার্যরকর করা হয়। আমি তাঁকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।' তিনি বলেন, 'এখন শুধুমাত্র শেষ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট যদি ক্ষমা করেন, তাহলেই কিছু হতে পারে।' এদিকে নিমিশার মা বর্তমানে ইয়েমেনের রাজধানী সানা-তে আছেন। (আরও পড়ুন: চিন্ময় প্রভুকে কি রীতিমতো 'ভয়' পাচ্ছে ইউনুস সরকার? তাদের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে...)
আরও পড়ুন: রাতের অন্ধকারে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ঢুকল মায়ানমার সেনা সদস্যরা!
এর আগে নিমিশাকে সব ধরনের সাহায্য করার বার্তা দিয়েছিল ভারত সরকার। এরই মাঝে আবার রিপোর্টে দাবি করা হয়, ইরান সরকারের তরফ থেকে এই ইস্যুতে ইয়েমেনের সঙ্গে কথা বলা হতে পারে। ইরানের সরকারের বক্তব্য, 'আমরা বিষয়টি ইয়েমেনের সামনে উত্থাপন করব। আমরা দেখব এই নিয়ে কী করা যায়।' উল্লেখ্য, ইয়েমেনের এক নাগরিককে হত্যার অভিযোগে ২০১৭ সাল থেকে ইয়েমেনের কারাগারে রয়েছেন প্রিয়া। সূত্রের খবর, এক মাসের মধ্যেই ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা। এই আবহে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বলেছে যে তারা এই কেসে সমস্ত বিকল্প খতিয়ে দেখছে। আর এরই মাঝে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার বার্তা দিল ইরান। (আরও পড়ুন: গোয়েন্দা রিপোর্টের কারণে হিন্দুদের BCS থেকে বাদ? এবার নয়া দাবি বাংলাদেশ সরকারের)
আরও পড়ুন: হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়া ভিড়, HMPV সংক্রমণ ছড়াতেই চিনে ফিরল কোভিড-১৯ স্মৃতি!
উল্লেখ্য, নিমিশা প্রিয়া ছিলেন কেরলের পলক্কড় জেলার বাসিন্দা ছিলেন। কর্মসূত্রে ইয়েমেনে নিজের স্বামীর সঙ্গে থাকতেন তিনি। ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী এবং মেয়ে ভারতে ফিরে আসে। এদিকে ২০১৬ সালে ইয়েমন থেকে যাতায়তে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত। সেই সময় ইয়েমেনের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করতেন। সেখানেই তলাত আবদো মেহদির সঙ্গে পরিচয় হয় প্রিয়ার। পরবর্তীতে প্রিয়াকে মেহদি একটি ক্লিনিক খোলার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কারণ ইয়েমেনে কোনও বিদেশি নাগরিক যদি ক্লিনিক খুলতে চায়, তাহলে তাকে স্থানীয় কারও সঙ্গে পার্টনারশিপে তা খুলতে হবে। সেই কারণেই মেহদিকে প্রয়োজন ছিল প্রিয়ার। এই আবহে ২০১৫ সালে মেহদির সাহায্যে ক্লিনিক খোলে প্রিয়া। (আরও পড়ুন: আন্দামান, মণিপুর… বাজেয়াপ্ত স্টারলিঙ্ক ডিভাইস নিয়ে তদন্ত, পদক্ষেপের পথে সরকার?)
আরও পড়ুন: ISIS অনুপ্রাণিত জব্বরের গাড়িতে ছিল IED ডেটোনেটর, আর বাড়িতে গোয়েন্দারা দেখলেন…
আরও পড়ুন: শুরু মান-অভিমান পালা, হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের 'সৈনিকরা' ক্ষুব্ধ, অবরোধ ঢাকায়
পরে মেহদির সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দেয় প্রিয়ার। মেহদি প্রিয়ার থেকে তাঁর পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেয়। এর জেরে সেই দেশেই আটকে পড়েন তিনি। এদিকে প্রিয়াকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিত মেহদি। এর জেরে মুসলিম দেশে পুলিশের সাহায্যও পায়নি প্রিয়া। নানান ভাবে প্রিয়াকে অত্যাচারও করত মেহদি। পরে কোনও ভাবে প্রিয়া পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন মেহদির নামে। ২০১৬ সালে গ্রেফতারও হয় মেহদি। পরে অবশ্য সে ছাড়া পেয়ে যায়। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই মেহদিকে ঘুম পাড়ানো ইনজেকশন দেয় প্রিয়া। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, লুকিয়ে রাখা পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে ভারতে ফিরে আসা। তবে সেই ইনজেকশনের ওভারডোজে মৃত্যু হয় মেহদির। প্রিয়া এক বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে মেহদির দেহটি কেটে ক্লিনিকের ট্যাঙ্কে রেখে তারা পালায়। পরে ২০১৮ সালে খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন প্রিয়া। পরে সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান নিমিশা প্রিয়া। ২০১৮ সাল থেকে আদালতে লড়াই চালাচ্ছিলেন প্রিয়া। অবশ্য সেদেশের শীর্ষ আদালতেও সেই মামলায় হেরে যান প্রিয়া। এরই মাঝে প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করেছেন ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি রাশাদ আল-আলিমি।