সুবিচার পেতে লেগে গেল আট বছরেরও বেশি সময়। অবশেষে ফাঁসিকাঠে ঝুলল নির্ভয়াকাণ্ডে দোষী চার আসামি। আইনের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত শান্তি পেল নির্ভয়ার আত্মা, দাবি তাঁর বাবা-মায়ের। ২০১২ থেকে ২০২০, ঘটনাপঞ্জিতে চোখ রাখলে কিছুটা বোঝা যায় সেই লড়াইয়ের গতি-প্রকৃতি।
১৬ ডিসেম্বর, ২০১২: দিল্লিতে শীতের রাতে চলমান বাসের ভিতরে ২৩ বছরের এক প্যারামেডিক্যাল পাঠরতা ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে ছয় জন। শুধু তাই নয়, সেই সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা ধরে নৃশংস অত্যাচার চলে তরুণীর উপরে। মারধর করা হয় সঙ্গে থাকা তরুণকে। শেষে বাস থেকে নিগৃহীতা ও তাঁর সঙ্গীকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বাস নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা।
দিল্লির এইমস হাসপাতালে অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকায় নির্ভয়াকে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ঘটনার ১৫ দিন পরে তাঁর মৃত্যু হয়।
৩ জানুয়ারি, ২০১৩: পাঁচ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে হত্যা, গণধর্ষণ, হত্যার চেষ্টা, অপহরণ, অস্বাভাবিক যৌন আচরণ ও ডাকাতির অভিযোগে চার্জশিট জমা দেয় দিল্লি পুলিশ। ঘটনায় জড়িত ষষ্ঠ অভিযুক্ত নাবালক ছিল বলে ২৮ জানুয়ারি রায় দেয় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড।
২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩: তিহাড় জেলে নিজের সেলের সিলিং থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় নির্ভয়াকাণ্ডে অভিযুক্ত বাসচালক রাম সিং।
৩১ অগস্ট, ২০১৩: গণধর্ষণ ও হত্যার দায়ে নবাবালক অভিযুক্তকে তিন বছরের জন্য প্রোবেশন হোমে বন্দি থাকার নির্দেশ দেয় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড।:
১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩: অভিযুক্ত মুকেশ, বিনয়, অক্ষয় ও পবনকে এক তরুণীকে গণধর্ষণ, অস্বাভাবিক যৌনাচার ও হত্যা, এবং তাঁর সঙ্গীকে হত্যার চেষ্টার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে দিল্লির ফাস্ট ট্র্যাক আদালত।
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩: নির্ভয়াকাণ্ডে চার দোষী সাব্যস্তকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ফাস্ট ট্র্যাক আদালত। মৃত্যুদণ্ড নির্দিষ্ট করতে মামলাটি দিল্লি হাই কোর্টে পাঠায় নিম্ন আদালত।
১ নভেম্বর, ২০১৩: দিল্লি হাই কোর্টে শুরু হয় নির্ভয়াকাণ্ড মামলার প্রাত্যহিক শুনানি।
১৩ মার্চ, ২০১৪: নিম্ন আদালতের রায়কে মান্যতা দিয়ে নির্ভয়াকাণ্ডে চার আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে হাই কোর্ট।
২০ ডিসেম্বর, ২০১৫: নির্ভয়াকাণ্ডে দোষী নাবালকের মুক্তি নাকচ করার আবেদন খারিজ করে দিল্লি হাই কোর্ট। তিন বছর হোমে কাটানোর পরে ছাড়া পায় সে।
২৭ মার্চ, ২০১৭: প্রায় একবছর শুনানির পরে নির্ভয়া মামলার রায় শোনানোর সিদ্ধান্ত নেয় সুপ্রিম কোর্ট।
৫ মে, ২০১৭: নির্ভয়াকাণ্ডে চার দণ্ডিতের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট।
৯ জুলাই, ২০১৮: মামলার তিন আসামি বিনয় শর্মা, পবন গুপ্তা ও মুকেশ সিংয়ের আদালতের রায় পর্যালোচনার আবেদন নাকচ করে দেয় শীর্ষ আদালত।
২৯ অক্টোবর, ২০১৯: দণ্ডিতদের প্রাণভিক্ষার আর্জি জানানোর জন্য সাত দিন সময় দেয় তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ। অন্যথায় তাদের নামে মৃত্যু পরোয়ানা জারির আবেদন জানানো হবে বলে জানায় জেল কর্তৃপক্ষ।
৮ নভেম্বর, ২০১৯: দিল্লি সরকারের কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানায় আসামি বিনয় শর্মা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সেই আবেদন খারিজ করলে তা ২৯ নভেম্বর মুখ্য সচিবের কাছে পাঠানো হয়।
৬ ডিসেম্বর, ২০১৯: শর্মার প্রাণভিক্ষার আর্জি নাকচের সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
৭ জানুয়ারি, ২০২০: সুপ্রিম কোর্টের রায় পর্যালোচনার আবেদন জানায় আসামি অক্ষয় সিং ঠাকুর।
৯ জানুয়ারি, ২০২০: ২২ জানুয়ারি নির্ভয়াকাণ্ডে চার দণ্ডিতের ফাঁসি কার্যকর করতে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে দিল্লির নিম্ন আদালত। ওই দিনই শীর্ষ আদালতের কাোছে কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করে আসামি বিনয় কুমার শর্মা ও মুকেশ সিং।
১৪ জানুয়ারি, ২০২০: রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানায় আসামি মুকেশ সিং। ওই দিনই বিনয় ও মুকেশের কিউরেটিভ পিটিশন খারিজ করেস দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ওই দিনই নিম্ন আদালতের জারি করা মৃত্যু পরোয়ানা স্থগিত রাখার আবেদন জানিয়ে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় আসামি মুকেশ সিং।
১৫ জানুয়ারি, ২০২০: মুকেশের আবেদন খারিজ করে দেয় দিল্লি হাই কোর্ট।
১৫ জানুয়ারি, ২০২০: প্রাণভিক্ষার আর্জির মীমাংসা হয়নি জানিয়ে ফাঁসি পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন দিল্লির নিম্ন আদালতে জমা দেয় মুকেশ সিং।
১৭ জানুয়ারি, ২০২০: আসামি মুকেশ সিংয়ের প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করে দেন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ।
১৭ জানুয়ারি, ২০২০: চার আসামিকে ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ সকাল ৬টায় ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য নতুন মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে দিল্লির আদালত।
১৮ জানুয়ারি, ২০২০: সুপ্রিম কোর্টে স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন জমা দিয়ে আসামি পবন গুপ্তা দাবি করে, নির্ভয়াকাণ্ডের সময় সে নাবালক ছিল।
২০ জানুয়ারি, ২০২০: পবনের আবেদন খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত।
২৫ জানুয়ারি, ২০২০: প্রাণভিক্ষার আর্জি নাকচ হওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় মুকেশ সিং।
২৮ জানুয়ারি, ২০২০: সুপ্রিম কোর্টে কিউরেটিভ পিটিশন জমা দেয় আসামি অক্ষয় ঠাকুর। আবেদনে প্রাণদণ্ডের পরিবর্তে আজীবন কারাদণ্ড চেয়ে আর্জি জানায় সে।
২৯ জানুয়ারি, ২০২০: মুকেশ সিংয়ের প্রাণভিক্ষা নাকচের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানানো আবেদন খারিজ করে শীর্ষ আদালত।
২৯ জানুয়ারি, ২০২০: সুপ্রিম কোর্টে এবার কিউরেটিভ পিটিশন জমা দেয় আসামি অক্ষয় ঠাকুর।
২৯ জানুয়ারি, ২০২০: রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানায় আসামি বিনয় শর্মা।
৩০ জানুয়ারি, ২০২০: ১ ফেব্রুয়ারি ফাঁসি স্থগিত রাখার আবেদন জানিয়ে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় চার আসামি।
৩০ জানুয়ারি, ২০২০: অক্ষয় ঠাকুরের কিউরেটিভ পিটিশন খারিজ করে সুপ্রিিম কোর্ট।
৩১ জানুয়ারি, ২০২০: তার নাবালকত্বের আবেদন খারিজের রায়ের পর্যালোচনার আর্জি জানিয়ে শীর্ষ আদালতে আবেদন করে পবন গুপ্তা।
৩১ জানুয়ারি, ২০২০: পরবর্তী নির্দেশসজারি না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি স্থগিত রাখার আদেশ দেয় দিল্লির আদালত।
৩১ জানুয়ারি, ২০২০: পবন গুপ্তার রায় পর্যালোচনার আবেদন খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট।
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০: বিনয় শর্মার প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করেন রাষ্ট্রপতি। ওই দিনই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার লআর্জি জানায় আসামি অক্ষয় ঠাকুর।
৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০: সমস্ত আইনি সাহায্য নেওয়ার জন্য আসামিদের এক সপ্তাহ সময় দেয় দিল্লি হাই কোর্ট।
৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০: অক্ষয় ঠাকুরের প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করেন রাষ্ট্রপতি।
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০: ফাঁসির নতুন দিনক্ষণ নির্ধারণ করতে দিল্লির নিম্ন আদালতের শরণাপন্ন হয় তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ।
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০: ফাঁসির নয়া দিনক্ষণ জানানোর আবেদন নাকচ করে দিল্ল্ির আদালত।
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০: প্রাণভিক্ষার আর্জি রাষ্ট্রপতির দ্বারা খারিজ হওয়াকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করে আসামি বিনয় শর্মা।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০: বিনয় শর্মার আবেদন খারিজ করে শীর্ষ আদালত।
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০: বিনয় শর্মার আবেদন খারিজ করে শীর্ষ আদালত।
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০: ৩ মার্চ ফাঁসির নতুন দিন ধার্য করে দিল্লির নিম্ন আদালত।
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০: বিনয় শর্মার প্রাণভিক্ষার আর্জি রাষ্ট্রপতিকে যে সময় পাঠানো হয়েছিল, সেই সময় নির্বাচন কমিশন দিল্লিতে নির্বাচনী নীতি জারি করেছিল বলে কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করে চার ফাঁসির আসামি।
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০: প্রাণদণ্ডকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিবর্তনের আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয় আসামি পবন গুপ্তা।
২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০: রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো প্রাণভিক্ষার আর্জি অসম্পূর্ণ ছিল জানিয়ে ‘সম্পূর্ণ’ প্রাণভিক্ষার আর্জি জানায় আসামি অক্ষয় ঠাকুর।
২ মার্চ, ২০২০: পবন গুপ্তার কিউরেটিভ পিটিশন খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট। একই দিনে ফাঁসি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় দিল্লির নিম্ন আদালত।
৪ মার্চ, ২০২০: পবন গুপ্তার প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করেন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ।
৫ মার্চ, ২০২০: ২০ মার্চ ভোর ৫.৩০ সময় ফাঁসি কার্যকর করতে নতুন মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে দিল্লির আদালত।
৬ মার্চ, ২০২০: সুপ্রিম কোর্টে মুকেশ সিংয়ের বর্তমান আইনজীবী তার প্রাক্তন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
১২ মার্চ, ২০২০: চার আসামির পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রপতির কাছে স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়ে আবেদন করেন।
১৬ মার্চ, ২০২০: মৃত্যুদণ্ড স্থগিতের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে আবেদন জানায় চার আসামির মধ্যে তিন জন। একই দিনে প্রাক্তন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মুকেশ সিংয়ের অভিযোগ নাকচ করে সুপ্রিম কোর্ট।
১৭ মার্চ, ২০২০: অপরাধের সময় সে দিল্লিতে ছিল না, মুকেশ সিংয়ের এই দাবি নাকচ করে দেয় দিল্লির আদালত।
১৮ মার্চ, ২০২০: নিম্ন আদালতের রকায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিল্লি হাই কোর্টে আবেদন জানায় আসামি মুকেশ সিং।
১৮ মার্চ, ২০২০: বিহারের আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন আসামি অক্ষয় সিংয়ের স্ত্রী।
১৯ মার্চ, ২০২০: প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় মুকেশ সিং।
১৯ মার্চ, ২০২০: ২০ মার্চে নির্ধারিত ফাঁসি স্থগিত রাখতে অস্বীকার করে দিল্লির নিম্ন আদালত।
১৯ মার্চ, ২০২০: রাষ্ট্রপতির প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অক্ষয় ঠাকুরের আবেদন বাতিল করে শীর্ষ আদালত।
২০ মার্চ, ২০২০: রাত দেড়টায় সুপ্রিম কোর্টে ফাঁসির চার ঘণ্টা আগে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখার আবেদন জানান চার আসামির আইনজীবী এ পি সিং। রাত আড়াইটের বিশেষ শুনানিতে সেই আবেদন ফের খারিজ হয়ে যায়।
২০ মার্চ, ২০২০: ভোর ৫.৩০ মিনিটে তিহাড় জেলে নির্ভয়াকাণ্ডে দণ্ডিত চার আসামিকে একসঙ্গে ফাঁসি দেওয়া হয়। ফাঁসির আদেশ কারযকর করেন ফাঁসুড়ে পবন জল্লাদ।