নির্মলা সীতারমনের বাজেটে বাংলার জন্যে কিছু নেই। সাম্প্রতিককালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা সংসদে দাঁড়িয়ে এই অভিযোগই করেছেন। আর এবার পালটা জবাবে আক্রমণ শানালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এই নিয়ে পিএম আবাস যোজনা থেকে শুরু করে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে দুর্নীতির প্রসঙ্গে তুলে ধরেন নির্মলা। মিড ডে মিলেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বলে সংসদে উল্লেখ করেন নির্মলা। ইতিহাসের পাতা থেকে তুলনা টেনে বাংলার শিল্পের বেহাল দশাও তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। (আরও পড়ুন: ট্রাম্পকে হারাতে চাঁদা দেওয়া ইউনুস এখন মার্কিন সাহায্যের জন্যে হা-হুতাশ করছেন!)
বাংলাকে নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, 'অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও ২০১৬-১৭ সাল থেকে পিএম আবাস যোজনা গ্রামীণ প্রকল্প চালু হয়েছিল। সরকার কেন্দ্রীয় অংশীদারিত্বের টাকা হিসেবে ২৫৭৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ২০১৬-১৭ সাল পর্যন্ত। ব্যাপক অভিযোগ এসেছে দুর্নীতির। সরকারি নিয়ম-নীতি মানা হয়নি। অযোগ্যদের টাকা দেওয়া হয়েছে। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পেও এই একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রক এর জন্যে রাজ্য সরকারের কাছে বারবার জবাব চেয়েছে। নীচু স্তরের সাধারণ মানুষকে লুট করা হয়েছে। মনরেগায় প্রচুর ভুয়ো জবকার্ড তৈরি করা হয়েছে। মিড ডে মিলে ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। রেশন মাফিয়াদের দাপট চলেছে পশ্চিমবঙ্গে।'
নির্মলা সীতারামন আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প নিয়েও বাংলাকে তোপ দাগেন। অভিযোগ করেন, ইচ্ছে করে এই প্রকল্প বাংলায় কার্যকর হতে দেয়নি তৃণমূল সরকার। এদিকে কেন্দ্রের জল প্রকল্পের প্রসঙ্গ তুলে নির্মলা দাবি করেন, দেশ জুড়ে বর্তমানে নলবাহী পানীয় জল সরবরাহের হার ৭৪ শতাংশ। তবে পশ্চিমবঙ্গে তা মাত্র ৪৩ শতাংশ। নির্মলা এরপর ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে বাংলাকে খোঁচা দিয়ে বলেন, '১৯৪৭ সালে গোটা দেশে ২৪ শতাংশ শিল্প ছিল পশ্চিমবঙ্গের। যা এখন ৩.৫ শতাংশে নেমে এসেছে।' আর বর্তমানের পরিস্থিতি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'গত কুড়ি বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের মাথাপিছু রোজগারের হার দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক পিছনে রয়েছে। এখন পশ্চিমঙ্গ দেশের সব রাজ্যগুলির মধ্যে ২৩তম স্থানে রয়েছে।'
এদিকে সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি হল ১৩.৭৯ ট্রিলিয়ন টাকা। এই তালিকায় সবেচেয়ে ওপরে থাকা মহারাষ্ট্রের অর্থনীতির পরিমাণ ৩১.৮০ ট্রিলিয়ন টাকা। কর্ণাটকের অর্থনীতি ২০.৫৬ ট্রিলিয়নের। ১৯৮১ সালে ভারতের অর্থনীতিতে বাংলার অবদান ছিল ৯.১ শতাংশ। বাংলা তখন মাহারাষ্ট্র এবং উত্তরপ্রদেশের নীচেই। কর্ণাটক তখন ভারতের অর্থনীতিতে মাত্র ৫.৩ শতাংশ অবদান রাখত। আর বর্তমানে জাতীয় অর্থনীতিতে পশ্চিমবঙ্গের অবদান ৫.৮ শতাংশ। আর কর্ণাটকের অবদান ৮ শতাংশের ওপরে। বাংলা এখন অবদানের নিরিখে দেশের নবম রাজ্য। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির ২৩ শতাংশ কৃষি নির্ভর। রাজ্যের ২৩ শতাংশ শিল্প নির্ভর এবং বাকি ৫৩ শতাংশ হল সার্ভিস নির্ভর। ১৯৮১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মাথা পিছু আয় কর্ণাটকের থেকে ১৬ শতাংশ বেশি ছিল। তবে তথ্য বলছে, ২০২১ সালে কর্ণাটকের মাথা পিছু আয় বাংলার তুলনায় ১১১ শতাংশ ওপরে চলে গিয়েছে। এখন কর্ণাটকে দেশের অন্যতম ধনী রাজ্য। আর পশ্চিমবঙ্গ এখন সেই তালিকায় নীচের দিকে স্থান পেয়েছে। চার দশকের মধ্যে দুই রাজ্য যেন নিজেদের অবস্থান অদলবদল করে নিয়েছে। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের মাথা পিছু আয় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪২ টাকা। মাথা পিছু আয়ের নিরিখে পড়শি সিকিম অনেকটাই এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গের থেকে।