নীতীশ কুমার কোনদিকে থাকবেন? বিজেপি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার পরে সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। সেই প্রশ্নের উত্তর আসার আগেই একই বিমানে পাটনা থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ এবং বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব। নীতীশের ঠিক পিছনেই বসেন আরজেডি নেতা। তবে দু'জনেই কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তার জেরে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক জল্পনা। কানাঘুষো শুরু হয়েছে যে তাহলে কি নরেন্দ্র মোদীর এনডিএয়ের ‘বিমান’ ছেড়ে বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটের ‘বিমানের’ সওয়ারি হলেন নীতীশ?
সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে জেডিইউ
যদিও সেরকম কোনও সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন নীতীশের দলের নেতারা। জেডিইউয়ের এক নেতা জানান, এনডিএ জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হলেন নীতীশ। এনডিএ জোটের বৈঠকে যোগ দিতেই দিল্লিতে যাচ্ছেন। তাঁর কথায়, 'জেডিইউয়ের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক কেসি ত্যাগী। জেডিইউ এনডিএতে ছিল এবং এনডিএতে থাকবে।'
জল্পনা উস্কে দিচ্ছে আরজেডি
আরজেডির এক নেতাও জানিয়েছেন যে দিল্লিতে বিরোধী জোটের বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন তেজস্বী। নীতীশের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নেহাতই কাকতলীয়। তবে ইন্ডিয়া জোটে নীতীশের প্রত্যাবর্তন নিয়ে জল্পনা উস্কে দিতে ছাড়েনি আরজেডি।
ওই নেতা বলেন, ‘২৭২ আসনের ম্যাজিক ফিগারের অনেক আগেই বিজেপিকে আটকে দেওয়া গিয়েছে। ইন্ডিয়া জোটও খুব একটা পিছিয়ে নেই। বিরোধীদের একই জায়গায় নিয়ে আসার কাজটা শুরু করেছিলেন নীতীশ কুমারই। পরবর্তীতে তিনি চলে গিয়েছেন। কিন্তু উনি সবসময় ফিরে আসতে পারেন।’
আরও একধাপ এগিয়ে নীতীশের প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডুকে জুড়ে দিয়ে আরজেডির মুখপাত্র মনোজ ঝা বলেন, ‘ওই দুই নেতা সবসময়ই ইন্ডিয়া জোটের কাঠামোর মধ্যে ছিলেন। তাঁদের যে সামাজিক মতাদর্শ আছে, তা বিজেপির সঙ্গে খাপ খায় না। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে নীতীশ কুমারের যে শীতল সম্পর্ক আছে, সেটাও কারও কাছে অজানা নয়।’
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
এবার লোকসভা নির্বাচনে ২৪০টি আসন পেয়েছে বিজেপি। এনডিএ জোটের সঙ্গে মিলিয়ে সেই সংখ্যাটা ২৯২-তে দাঁড়াচ্ছে। অর্থাৎ ২৭২-র ম্যাজিক ফিগার পার করে যাচ্ছে। অর্থাৎ সরকার গঠনের জন্য কিছুটা হলেও এনডিএ জোটের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে বিজেপিকে। যা ২০১৪ সাল এবং ২০১৯ সালে হয়নি। নিজেরাই ২৭২-র বেশি আসন পেয়ে যাওয়ায় এনডিএ জোটসঙ্গীদের তেমন গুরুত্ব ছিল না। এবার ঠিক উলটো বিষয়টা হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে এনডিএ জোটে ভাঙন ধরাতে পারলে বিরোধীদের কপাল খুলে যাবে।
বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এনকে চৌধুরী জানিয়েছেন যে এখনই কিছু বলার মতো সময় আসেননি। তবে এটাও ঠিক যে রাজনীতিতে সবকিছুই হতে পারে। তাঁর কথায়, ‘নীতীশ কুমার আবার একটা সুযোগ পেলেন। তিনি যেদিকে চান, সেদিকে খেলা ঘোরানোর সুযোগ পেয়ে গেলেন। উনি কীভাবে এগিয়ে যান, সেটা সময়ই বলবে।'
সেইসঙ্গে তিনি বলেন, 'তবে আশপাশে যে জটিলতা আছে, সেটার জন্য তাঁর পক্ষে শিবির পরিবর্তনের কাজটা খুব সহজ হবে না। উনি অত্যন্ত অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। ফলে কখন ও কীভাবে নিজের কার্ড খেলতে হবে, সেটা উনি খুব ভালোভাবেই জানেন।’