পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অন্দরে কোনও গোপন কুঠুরি বা সুরঙ্গ নেই। এমনটাই দাবি করেছেন ওডিশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচরণ।
উল্লেখ্য, পুরীর মন্দিরে এই ধরনের কোনও গোপন নির্মাণ রয়েছে কিনা, তা জানার জন্য প্রযুক্তিগত সমীক্ষা চালায় 'আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া' (এএসআই)। কিন্তু, তাতে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারের ভিতর কোনও গোপন কক্ষ বা সুরঙ্গের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত এই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে এএসআই-এরই উপর। যদিও তারা এখনও পর্যন্ত তাদের চূড়ান্ত সমীক্ষা রিপোর্ট জমা করেনি।
তবুও, সমীক্ষক দলের সদস্যদের সঙ্গে প্রাথমিকস্তরে আলোচনার পর পৃথ্বীরাজ হরিচরণ জানান, পুরীর মন্দিরের নীচে কোনও গোপন নির্মাণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী জানান, 'চূড়ান্ত সমীক্ষা রিপোর্ট হাতে পেতে এখনও হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু, প্রাথমিকভাবে কথাবার্তা বলা পর এটুকু জানা গিয়েছে যে ওখানে আর কোনও গোপন সুরঙ্গ নেই। যদিও এই সমীক্ষার ফলে একটি বিশেষ সুবিধা হয়েছে। রত্ন ভাণ্ডারের নীচে যে সমস্ত ফাটল ধরেছে, সেগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গিয়েছে। ওই সমস্ত ফাটল মেরামত করার জন্য এএসআই স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করবে।'
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই অনুমান করা হচ্ছিল, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারের নীচে কোনও গোপন সুরঙ্গ থাকতে পারে। সেই কারণেই এই বিষয়ে বিস্তারিত সমীক্ষা ও অনুসন্ধানের দাবি তোলা হয়েছিল।
সেই দাবির প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার এএসআই-কে প্রযুক্তিগত সমীক্ষা চালানোর অনুমতি দেয়।
'শ্রী জগন্নাথ টেম্পল অ্য়াডমিনিস্ট্রেশন' (এসজেটিএ)-এর তরফে গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে এএসআই-কে এই বিষয়ে সমীক্ষা চালানোর অনুরোধ জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সমীক্ষক দলে 'কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্য়ান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ' (সিএসআইআর) এবং 'ন্যাশনাল জিওফিজিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট' (এনজিআরআই)-এর বিজ্ঞানীরাও ছিলেন।
সমীক্ষক দলের সদস্যরা প্রথমেই রত্ন ভাণ্ডারের লেজার স্ক্যানিং করেন। এরপর সমস্ত তথ্য ব্যবহার করে রত্ন ভাণ্ডার ও সংশ্লিষ্ট এলাকার মানচিত্র নির্মাণ করা হয়।
এই পুরো সমীক্ষা চলাকালীন যত তথ্য হাতে এসেছে, সেই তথ্যাবলী রিপোর্ট আকারে প্রকাশ করা হবে। এএসআই আধিকারিকদের তরফে একথা জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রায় ৪৬ বছর পর, গত ১৪ জুলাই ওডিশা সরকার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার খোলে। এরপর মন্দির চত্বরেই একটি অস্থায়ী রত্ন ভাণ্ডার গড়ে তোলা হয়। জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রার জন্য নির্মিত যে সমস্ত মহামূল্যবান গয়না ও অন্য়ান্য দামি সামগ্রী রয়েছে, সেগুলিকে সাময়িকভাবে সেই অস্থায়ী রত্ন ভাণ্ডারে স্থানান্তরিত করা হয়।
কিন্তু, এরই মাঝে কার্তিক মাস পড়ে যাওয়ায় মন্দিরের ভক্তদের ভিড় বাড়ে। ফলত, মন্দিরের সংস্কারের কাজে হাত লাগাতে এএসআই-কে নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এই প্রসঙ্গে হরিচরণ বলেন, 'এই সংস্কারের কাজ শেষ করতে মাস দেড়েক সময় লাগবে। রত্ন ভাণ্ডারের সংস্কার পর্ব শেষ হলেই সরকার সমস্ত মহামূল্যবান সামগ্রী সেখানে স্থায়ীভাবে সরিয়ে রাখা হবে। এরপর সেখানে রাখা সমস্ত সামগ্রীর তালিকা তৈরি করা হবে।'
উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালে শেষবার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারের সঞ্চিত ধন সম্পদের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। রাজ্যের আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন তালিকা তৈরি হলে তা পুরোনো তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। খতিয়ে দেখা হবে, সমস্ত সম্পদ রত্ন ভাণ্ডারের অন্দরে সুরক্ষিত রয়েছে কিনা!
প্রসঙ্গত, ওডিশার শেষ বিধানসভা নির্বাচনে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের এই রত্ন ভাণ্ডার খোলা এবং তার নিরাপত্তাই ছিল বিজেপির কাছে প্রধান নির্বাচনী ইস্যু। যাকে হাতিয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের নেতৃত্বাধীন বিজু জনতা দলের সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করে রাজ্যের বর্তমান শাসকদল বিজেপি।