২৪ ঘণ্টার ওপর কেটে গিয়েছে দিল্লির রাস্তায় তাণ্ডবলীলার পর। যেখানে একদল উশৃঙ্খল কৃষকের হাতে প্রহৃত হয়েছেন পুলিশ অফিসাররা, লাল কেল্লায় চড়াও হয়ে তোলা হয়েছে ধর্মীয় পতাকা। কোনও অপরাধীকে যে দিল্লি পুলিশ ছাড়বে না ও কৃষক নেতারা যে নিজেদের দায় এড়াতে পারেন না, প্রেস কনফারেন্স করে সেই কথা বললেন দিল্লির পুলিশ কমিশনার। অন্যদিকে নজিরবিহীন ঘটনার পর অনেকটাই চাপে কৃষক সংগঠনগুলি। ইতিমধ্যেই দুটি সংগঠন জানিয়েছে তারা এই প্রতিবাদ আর চালাতে চায় না। পাততাড়ি গুটিয়েছে তারা প্রায় দুই মাস পর দিল্লির সীমান্ত থেকে। কৃষকদের বাজেটের দিন সংসদ অভিযানের যে পরিকল্পনা ছিল, সেটাও বাতিল করা হয়েছে।
এদিন পুলিশ কমিশনার এসএন শ্রীবাস্তব বলেন যে কৃষিনেতারা উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়ে চাষীদের খেপিয়েছিল। যে সব শর্ত চাষীরা মানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাস্তবে সেগুলি তারা ভঙ্গ করেন বলে পুলিশ দাবি। সব মিলিয়ে ৩৯৪ জন পুলিশ আহত হয়েছে, এর মধ্যে অনেকেই সঙ্গীন অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি। এখনও পর্যন্ত ২৫টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সিসিটিভি ও মুখ শনাক্ত করার সফটওয়্যার ব্যবহার করছে পুলিশ দাঙ্গাকারীদের ধরার জন্য। কেউ যে ছাড় পাবেন না, সেই আশ্বাস দেন তিনি। ইতিমধ্যে ২০০জনকে আটক করেছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে এফআইআরে নাম আছে রাকেশ তিকাইত, যোগেন্দ্র যাদব, গুরনাম সিং চাদুনি, দর্শন পাল সহ ৩৭ জন কৃষি নেতার। সময়পুর বদলিতে যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে তাতে আছে এদের নাম। দাঙ্গায় এদের ভূমিকা কি ছিল, সেটা খতিয়ে দেখা হবে। আইপিসির ১৪৭, ১৪৮, ৩০৭, ১২০বি-র মতো কড়া ধারায় কেস রেজিস্টার করা হয়েছে। অর্থাৎ কৃষকদের বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টা, ষড়যন্ত্র ও দাঙ্গার অভিযোগ করেছে পুলিশ।
এদিন লাল কেল্লার অবস্থা দেখতে যান পর্যটনমন্ত্রী প্রহ্লাদ প্যাটেল। সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে আছে, টিকিট কাউন্টারে ভাঙচুর হয়েছে, মেটাল ডিটেকটর ভাঙা হয়েছে দেখে রিপোর্ট তলব করেন মন্ত্রী। দিল্লি পুলিশকর্তা বলেন যে চাষীরা বলেছিল নির্দিষ্ট রুটে দুপুর বারোটা থেকে পাঁচটার মধ্যে প্রজাতন্ত্র দিবসে হবে ট্র্যাক্টর মিছিল। নেতৃত্বে থাকবেন নেতারা। কিন্তু বাস্তবে অনেক আগে থেকেই শুরু হয় মিছিল। চলে যায় অন্য রুটে। পাঁচ হাজারের থেকে অনেক বেশি ট্র্যাক্টর এসে গিয়েছিল। পুলিশ কর্তা বলেন যে সতনম সিং পান্নু ও দর্শন পালের মতো নেতারা উস্কেছিলেন তাদের বক্তব্যের মাধ্যমেই।
অন্যদিকে সংযুক্ত কিষান মোর্চা জানিয়েছে যে আন্দোলন চলবে কিন্তু পয়লা ফেব্রুয়ারি বাজেটের দিন সংসদ অভিযানের যে পরিকল্পনা ছিল, সেটা বাতিল করা হচ্ছে। পরিবর্তে ৩০ জানুয়ারি জনসভা সংগঠিত করবে চাষীরা। একদিনের উপবাসও করবে তারা। কৃষক নেতাদের দাবি যে সরকারের কলকাঠি ছিল বিক্ষিপ্ত হিংসার নেপথ্যে। তবে তারপরেও ৯৯.৯৯ শতাংশ চাষী শান্তিপূর্ণ ছিল বলে তাদের দাবি। কেন পঞ্জাব কিষান মজদুর সংঘর্ষ কমিটির সদস্যদের পুলিশ আটকালো না, সেই প্রশ্ন করেন ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের নেতা বলবীর রাজেওয়াল।
তবে ইতিমধ্যেই এই আন্দোলন থেকে নাম প্রত্যাহার করেছে রাষ্ট্রীয় কিষান মজদুর সংগঠন। মুখপাত্র ভিএম সিং বলেন যে আন্দোলন যে দিকে যাচ্ছে সেটা তারা মেনে নিতে পারছেন না। তিনি বলেন যে এমএসপি-র জন্য আন্দোলনে এসেছিলেন তাঁরা কিন্তু লোকজন মার খাচ্ছে সেটা কাম্য নয়। অন্যদিকে ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন(ভানু) গোষ্ঠীও কৃষক আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। গোষ্ঠীর প্রধান ঠাকুর ভানু প্রতাপ সিং বলেন যে তাঁরা চিল্লা সীমান্ত থেকে তাদের ৫৮ দিনের প্রতিবাদ প্রত্যাহার করছেন।