শিকল বেঁধে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরানো নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মার্কিন সরকার যে অমানবিক আচরণ করেছে, তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকার কার্যত কোনও প্রতিবাদ জানায়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধী নেতারা। তারইমধ্যে শুক্রবার ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি দাবি করলেন, অতীতেও আমেরিকা থেকে অবৈধ অভিবাসীদের ভারতে ফেরানো হয়েছে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর ২০০৯ সাল থেকে তথ্য পেশ করেছেন। তিনি চাইলে আরও অনেক দিনের পরিসংখ্যান দিতে পারতেন। আর ২০১২ সালে ভারতীয়দের শিকল বেঁধে ফেরানোর বিষয়ে সরকারের তরফে প্রতিবাদ জানানোর কোনও রেকর্ড নেই।
পায়ে বেড়ি, হাতে হাতকড়া- অমানবিক আচরণ আমেরিকার
আর বিদেশ সচিব যেদিন সেই মন্তব্য করেছেন, তার আগেরদিনই প্রথম দফায় আমেরিকা থেকে ফেরত আসা ১০৪ অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে সংসদে মুখ খোলেন বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর। বুধবার ওই ১০৪ জনকে নিয়ে অমৃতসরে নামে মার্কিন বায়ুসেনার সি-১৭ বিমান। তাঁদের মধ্যে অনেকেই দাবি করেছেন যে পুরো বিমানে তাঁদের হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছিল। চেন দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল পা। অমৃতসরে নামার পরেই সেইসব খোলা হয়।
আমেরিকার তরফেও যে ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে যে পায়ে চেন বেঁধে ভারতীয়দের বিমানে তোলা হচ্ছে। মহিলারা অভিযোগ করেছেন যে পায়ে বেড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছিল। হাতে হাতকড়া ছিল। আর সেটা শুধু বিমানে নয়, একইরকমভাবে তাঁদের বাসেও তোলা হয়েছিল। তাঁদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল। অমৃতসরে অবতরণের পরই তাঁরা জানতে পারেন যে কোথায় এসেছেন।
ট্রাম্পের হয়ে সাফাই দিচ্ছিলেন জয়শংকর, আক্রমণ কংগ্রেসের
আর পুরো বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদের তুমুল আক্রমণের মুখে পড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিবৃতি দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। তাঁকে যত না বেশি ভারতের বিদেশমন্ত্রী বলে মনে হচ্ছিল, তার থেকে বেশি (ডোনাল্ড) ট্রাম্প প্রশাসনের হয়ে কৈফিয়ত প্রদানকারী হিসেবে মনে হচ্ছিল। এই বিষয়টা চূড়ান্ত হতাশাজনক যে ভারতীয়দের সঙ্গে যেরকম আচরণ করা হয়েছে, সেটার সমালোচনা করে বিদেশমন্ত্রীর বিবৃতিতে একটি শব্দও ছিল না। (ভারতীয়দের সঙ্গে যেরকম আচরণ করা হয়েছে), সেটার নিন্দা করা উচিত ছিল সরকার ও বিদেশমন্ত্রীর।’
আমেরিকার কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছে ভারত
সেই আবহে শুক্রবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে যে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে, সেই বিষয়টি আমেরিকার কাছে উত্থাপন করা হয়েছে। উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে সেই ঘটনা নিয়ে। বিশেষত মহিলাদের পায়ে বেড়ি পরিয়ে এবং হাতে হাতকড়া পরিয়ে আনার ব্যাপারটাও উত্থাপন করা হয়েছে। আগামিদিনেও সেই কাজটা করা হবে বলে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে।