২০২৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয়ী হলেন হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো । অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য তাঁকে সমাদর এনে দিয়েছে। প্রায়শই ফ্রানজ্ কাফকা এবং টমাস বার্নহার্ডের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মাঝেও বারবার শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে উঠেছে তাঁর লেখায়। তাই তাঁর সাহিত্য এই যুদ্ধবিধ্বস্ত বছরের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল নোবেলের পুরস্কার তালিকায়।
নোবেল কমিটির কথায়, লাসলোর লেখা একাধারে মনোমুগ্ধকর ও দূরদর্শী। বৃহস্পতিবার সুইডিশ আকাডেমির বিশেষ অনুষ্ঠানে আলাদা করে নোবেল কমিটির সদস্যরা উল্লেখ করেন লাসলোর ‘হার্শট ০৭৭৬৯’। জার্মানিকে কেন্দ্র করে রচিত এই উপন্যাসের জোরেই এই বছর নোবেলের শিরোপা অর্জন করলেন লাসলো।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির রোমানিয়ার সীমান্তের নিকটবর্তী ছোট্ট শহর গিউলায় জন্ম লেখকের। মাত্র ২১ বছর বয়সে তাঁর প্রথম রচনা ‘স্যাটানটাঙ্গো’। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম এবং অন্যতম বিখ্যাত উপন্যাস তাঁকে সাহিত্য জগতে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল জাতীয় স্তরে। এক বিচ্ছিন্ন, পতিত একটি কৃষি সমবায় গ্রামের জীবনকে তুলে ধরে এই উপন্যাস। এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমন সেখানে এক ধরণের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয়। এই উপন্যাস অবলম্বনেই বিখ্যাত পরিচালক বেলা তার পাঁচ ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন।
২০১৪ সালে লাসলো তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকারে (Man Booker International Prize) সম্মানিত হন। এই পুরস্কার বিশ্ব সাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করে। তাঁর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল স্বতন্ত্র শৈলী এবং গঠন। লাসলোর উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা, এবং আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায় এক ধরণের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা। এমন এক জগতের পথিক তাঁরা, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিসট্যান্স’ উপন্যাসে আবার হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরে একটি বিশাল হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যেকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা এবং একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে।
লাসলোর অন্যতম বিখ্যাত উপন্যাস ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’। দীর্ঘ বাক্যের সমন্বয়ে রচিত এই উপন্যাস ফের লাসলোর শৈলী নিয়ে নতুন করে ভাবায় পাঠকদের। নায়ক ইয়াঙ্কো এই কাহিনিতে ভেলনার বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায় একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য। এটি বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা। নোবেল কমিটির মনোনয়নের নেপথ্যে বড় কারণ ছিল লাসলোর সাহিত্যে শিল্পের এই জয়ধ্বনি নির্মাণের প্রচেষ্টা। একবিংশ শতক তথা ২০২৫ সালে যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের অন্তর্নিহিত প্রেম ও সৌন্দর্যক্ষমতার কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।