গণ-আত্মহত্যা নয়, বরং ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুন। তেলাঙ্গানায় কুয়ো থেকে ৯ পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় সামনে এল এমনই তথ্য।
ওয়ারাঙ্গেল সিটি পুলিশ কমিশনার ভি রবিন্দর জানিয়েছেন, গত মার্চের একটি খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওই ন'জন পরিযায়ী শ্রমিককে খুন করা হয়েছে। অভিযুক্ত সঞ্জয় কুমার যাদবকে (২৪) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত শুক্রবার ওয়ারাঙ্গেলের জেসুগন্ডা ব্লকের গোরেকন্টার গ্রামের একটি কুয়ো থেকে ন'জনের দেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছ'জন পশ্চিমবঙ্গের এবং একই পরিবারের সদস্য। তাঁরা হলেন - মহম্মদ মকসুদ (৫৫), তাঁর স্ত্রী নিশা (৪৮), দুই ছেলে শাবাদ (২১) ও সোহেল আলম (১৮), মেয়ে বুশরা (২০) এবং তিন বছরের নাতি শোয়েব। এছাড়াও বিহারের বাসিন্দা শ্রীরাম (২১) ও শ্যাম (২২) এবং ত্রিপুরার শাকিলের দেহ উদ্ধার করা হয়। বড়রা সবাই একটি জুটমিলে কাজ করতেন ও লকডাউন শুরুর পর সেখানেই আটকে ছিলেন।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ অনুমান করেছিল, অর্থাভাবে বা অন্য কোনও পারিবারিক কারণে তাঁরা গণ-আত্মহত্যা করেছেন। পাশাপাশি বুশরার সঙ্গে একট বিহারি যুবকের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়েও তদন্ত চলছিল। এক বছর আগেই বুশরার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল।
কিন্তু তদন্ত শুরু হতেই ক্রমশ রহস্যের জট খোলে। পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, সঞ্জয়ের সঙ্গে মকসুদের শালী রাফিকার (৩৭) সম্পর্ক ছিল। যিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে তেলাঙ্গানায় গিয়েছিলেন। কমিশনার বলেন, 'তিন সন্তান-সহ সঞ্জয়ের সঙ্গে আলাদা থাকতে শুরু করেন রাফিকা। পরে তিনি বুঝতে পারেন, সঞ্জয় তাঁর বড় মেয়েকেও ফাঁদে ফেলছে। তা সহ্য করতে না পেরে সঞ্জয়ের কীর্তি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেয়।'
তারপরই রাফিকাকে খুনের ছক কষে সঞ্জয়। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত ৬ মার্চ রাফিকার সঙ্গে ট্রেনে করে পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশে রওনা দেয় সে। পথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচৈতন্য করে রাফিকাকে খুন করে ওই যুবক। তারপর পশ্চিম গোদাবরী জেলার নিদুব্রোলুতে ট্রেন থেকে রাফিকার দেহ ফেলে দিয়ে রাজাহুন্ড্রিতে ওয়ারাঙ্গেলে ফিরে আসে।
কয়েকদিন পর রাফিকার বিষয়ে সঞ্জয়ের কাছে খোঁজখবর করেন মকসুদ। সঞ্জয় জানায়, পরিবারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে থেকে গিয়েছেন রাফিকা। কিন্তু দু'মাস পরেও কোনও খবর না পাওয়ায় সন্দেহ গাঢ় হয় মকসুদের। সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানানোর হুমকিও দেন।
কীর্তিকলাপ ফাঁস হওয়ার ভয়ে সপরিবার মকসুদকে খুনের পরিকল্পনা করে সঞ্জয়। সেজন্য স্থানীয় একটি দোকান থেকে ঘুমের ওষুধ কিনে আনে সে। তারপর গত ২০ মে মকসুদের ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের খাবার সেই ওষুধ মিশিয়ে দেয়। তা খেয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়েন মকসুদের পরিবারের সব সদস্য এবং তিন যুবক।
ওয়ারাঙ্গেলের পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘ওঁরা সবাই অচৈতন্য হয়ে গিয়েছে নিশ্চিত হয়ে তাঁদের কুয়োর কাছে নিয়ে আসে সঞ্জয়। তারপর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২ টা থেকে ভোর পাঁচটার মধ্যে একে একে তাঁদের কুয়োয় ফেলে দেয়। ঘটনাস্থলে প্রমাণ, সিসিটিভি ফুটেজ ওবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে আমরা জানতে পেরেছি যে সঞ্জয় কুমার যাদব ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে। সে ছ'বছর আগে বিহার থেকে এসেছিল এবং একই কারখানায় কাজ করত।’
পুলিশ জানিয়েছে, প্রমাণের ভিত্তিতে সঞ্জয়কে গ্রেফতার করা হয়। কমিশনার বলেন, ‘জেরার সময় সে অপরাধ স্বীকার করেছে।’