শিশির গুপ্ত ও রেজাউল লস্কর
ক্রমশ চাপ বাড়ছে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির উপর। তারইমধ্যে এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেল নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির (এনসিপি) স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক।
কাঠমান্ডু এবং নয়াদিল্লি সূত্রে খবর, নেপালের বিভিন্ন প্রান্তে প্রবল বৃষ্টি, ধস এবং বন্যার কারণ দর্শিয়ে বৈঠকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত রাত পর্যন্ত বৈঠক পিছিয়ে দেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান পি কে দহল তথা প্রচণ্ড। তবে মাধব নেপাল এবং ঝালনাথ খানালের মতো দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর বৈঠক পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন তিনি। এটাই প্রথমবার নয়, আগেই স্থগিত হয়ে গিয়েছে সেই বৈঠক।
এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার থেকে নেপালে দূরদর্শন ছাড়া সমস্ত ভারতীয় খবরের চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নাম গোপন রাখার শর্তে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, নেপাল সরকারের তরফে সরকারিভাবে ভারতীয় চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ডিসহোম, ডিএসএন, মাই টিভি, মেগা ম্যাক্সের মতো কেবল অপারেটররা নিজেরাই সেই চ্যানেলগুলি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে একটি বেসকারি সংবাদ চ্যানেলের ‘অবমাননাকর’ ভিডিয়ো তুলে ধরে নেপালে ভারত বিরোধী ভাবাবেগ আরও উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে ওলি সরকার। সরাসরি না হলেও সেই ভিডিয়োর জন্য নয়াদিল্লিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে কাঠমান্ডু।
নেপালের শাসক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রঞ্জন ভট্টরাই একটি টুইটবার্তায় বলেন, ‘নয়া মানচিত্র প্রকাশের পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তরফে যে খবর আসছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা সম্পূর্ণভাবে এই মনগড়া এবং ভুয়ো রিপোর্টকে বাতিল করে দিচ্ছি। আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে নেপালের সরকার এবং মানুষের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে সম্মান জানানোর জন্য ওদের (ভারত) আর্জি জানাচ্ছি।’ তবে সরকারের তরফে ভারতীয় সংবাদ চ্যানেলে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত প্রশ্নের সময় নেপালের তথ্যমন্ত্রী যুবরাজ খাতিওয়াড়া জানান, সরকারের নিষেধাজ্ঞা চাপানোর থেকে সংযম বজায় রেখে ভারতীয় চ্যানেলগুলি ‘সঠিক’ খবর পরিবেশন করছে, সেই বিষয়টি ভালো।
মেগা ম্যাক টিভি কেবল নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি ধ্রুব শর্মা অভিযোগ করেন, নেপালের বিষয়ে ‘অতিরঞ্জিত এবং অভাবনীয় অপপ্রচার’ চালাচ্ছে ভারতের সংবাদ চ্যানেলগুলি। বিশেষত ওলি এবং নেপালে চিনা রাষ্ট্রদূত হোউ ইয়ানকিকে নিয়ে ‘আপত্তিকর’ সংবাদ পরিবেশন করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে এক নেপাল বিশেষজ্ঞ জানান, বর্তমানে নেপালের রাজনীতিতে টিকে থাকার সহজতম উপায় হল, যাবতীয় কাজের জন্য ভারত সরকারকে দোষারোপ করা। প্রত্যেকেই জানেন বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের উপর প্রভাব খাটায় না নয়াদিল্লি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ওলির উপর থেকে চাপ কমাতে এটাই সবথেকে কার্যকরী 'বুলেট' বলে মন্তব্য করেন ওই বিশেষজ্ঞ।