ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (NPS) হল ভারত সরকারের এক বিশেষ পেনশন প্ল্যান। এটি একক বিনিয়োগের মাধ্যমে ইক্যুইটি এবং ঋণের সুবিধা, উভয়ই প্রদান করে। ঋণ এবং ইক্যুইটি এক্সপোজারের ক্ষেত্রে NPS অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের ফ্লেক্সিবিলিটি মেলে। অন্যদিকে, বিনিয়োগকারীদের এ ক্ষেত্রে ভরসাও অনেক বেশি থাকে। কারণ এটি এমন একটি প্ল্যান, যা সরকারের সমর্থিত। তাছাড়া এই পেনশন পরিকল্পনার মাধ্যমে অবসর-পরবর্তী মাসিক পেনশনের সুবিধাও রয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই এনপিএস-এর বিষয়ে জানতে চান অনেকেই। কেন এই স্কিম নিয়ে সবার এত বেশি আগ্রহ?
এ বিষয়ে কেফিনটেকের কর্তা, অজিত কুমার জানালেন, এনপিএসের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হল এর অত্যন্ত সহজ এবং ফ্লেক্সিবেল নেচার। এনপিএস একটি স্বেচ্ছামূলক বিনিয়োগ ব্যবস্থা। ফলে কেউ যদি এতে বিনিয়োগ করতে চান, তাঁদের প্রত্যেকেই তাঁদের সুবিধা মতো টাকা রাখার সুযোগ পান।
মোদী সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এই NPS প্রকল্প এখন আরও লাভজনক হয়ে উঠতে পারে। বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ জিতেন্দ্র সোলাঙ্কি বললেন, 'সম্প্রতি ভারত সরকার পেনশন তহবিলে এফডিআই সীমা ৪৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৪ শতাংশ করেছে। এটি PFRDA-এর প্রস্তাবও গ্রহণ করেছে। পেনশন তহবিল থেকে আইপিওতেও বিনিয়োগ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে উদ্যোগগুলি দীর্ঘমেয়াদে NPS অ্যাকাউন্টধারীদের অনেক লাভ হবে।'
কেন NPS-এর প্রতি সবার আগ্রহ বাড়ছে? এ বিষয়ে KFintech-এর অজিত কুমার নিম্নলিখিত ৫টি কারণ ব্যাখ্যা করলেন:
১] বিনিয়োগের স্বাধীনতা: বছরের যে কোনও সময়ে একবার বিনিয়োগের টাকা রাখতে পারেন। আবার চাইলে আপনি প্রতি মাসেও তা করতে পারেন। টায়ার ১ এবং টায়ার ২ অ্যাকাউন্টের জন্য বার্ষিক ন্যূনতম যথাক্রমে ৫০০ এবং ১,০০০ টাকা রাখতে হবে। বিনিয়োগের পরিমাণও ইচ্ছা মতো পরিবর্তন করতে পারবেন। খালি সেটা নির্ধারিত ন্যূনতম পরিমাণের উপরে থাকলেই হল।
২] আমজনতার আস্থা: এনপিএস-এর অন্যতম সুবিধা হল, আপনার কাছে শুধুমাত্র একটি এনপিএস অ্যাকাউন্টই থাকবে। মানে? এক মানে এই যে, আপনি চাকরি পরিবর্তন করলে, বা একটি নতুন শহরে স্থানান্তরিত হলেও, আপনার এনপিএস অ্যাকাউন্ট আপনার সঙ্গে সঙ্গেই যাবে।
এটি একটি সরকার সমর্থিত স্কিম। ফলে NPS-এর এই আস্থার জায়গাটা অনস্বীকার্য। এটি সম্পূর্ণভাবে PFRDA-এর তত্ত্বাবধান এবং নিয়ন্ত্রণে থাকে। সম্পূর্ণ সেটআপটি অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সহজ। ফলে আপনার বিনিয়োগের কার্যকারিতা নিরীক্ষণ এবং পর্যালোচনা করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
এগুলি ছাড়াও, NPS আগামী ৬-৮ মাসের মধ্যে একটি নতুন প্রোডাক্ট চালু করার পরিকল্পনা করছে। সূত্রের খবর, এটি বিনিয়োগে নিশ্চিত রিটার্ন নিয়ে বিতর্কের নিষ্পত্তি করতে সাহায্য করতে পারে।
৩] নিজের ফান্ড ম্যানেজার বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা: বিনিয়োগ শুরু করার পরে, আপনি টাকা কোথায় বিনিয়োগ করবেন এবং কে তা পরিচালনা করবে তাও ইচ্ছা মতো ঠিক করতে পারেন। আপনি যদি তহবিল ম্যানেজারেক সঙ্গে সহমত না হন, সেক্ষেত্রে বছরে একবার তা পরিবর্তনও করতে পারেন। আপনি যদি পুরো বিষয়টা নিয়ে খুশি না হন, এবং আপনি যে রিটার্ন পান তা আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী না হয়, সেক্ষেত্রে আপনি বছরে দু'বার বিনিয়োগের অন্য অপশনগুলির মধ্যে সুইচ করতে পারবেন।
অল্পবয়সীরা সাধারণত বেশি ঝুঁকি নিতে তৈরি থাকেন। তাঁদের বিনিয়োগে উচ্চতর রিটার্নের চাহিদা থাকে। এদিকে এমন ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ করার ইচ্ছা সাধারণত বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়। যাঁরা বেশি ঝুঁকি নিয়ে চিন্তা করেন না, তাঁদের জন্য, NPS, আপনার কর্পাসের ৭৫% পর্যন্ত ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেবে। অন্যদিকে যাঁরা তাঁদের রিটার্নে কোনও ঝুঁকি চান না, তাঁদের সমস্ত কর্পাস সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করার অপশন রয়েছে।
৪] আয়করে সুবিধা: এনপিএস-এ বিনিয়োগ করলে আপনি বিভিন্ন বিভাগের অধীনে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করছাড়ের সুবিধা পেতে পারেন।
৫] অবসর-পরবর্তী মাসিক আয়ের প্রতিশ্রুতি: আপনার অবসর গ্রহণের পরে, মোট কর্পাসের ৬0% পর্যন্ত এককালীন হিসাবে তুলে নিতে পারেন। বাকি ৪০% একটি বার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারবেন। অবসর গ্রহণের পরে যে এককালীন টাকা তুলবেন, সেটায় কর ছাড় পাবেন।
মনে রাখবেন, এনপিএস আপনার বিনিয়োগের উপর কোনও রিটার্নের হারের নিশ্চয়তা দেয় না। তবে এটি এই গ্যারান্টি দেয় যে, পরবর্তী সময়ে আপনার একটি অন্তত পেনশন থাকবে। এনপিএসে আপনার নিজের বিনিয়োগের মাধ্যমেই পরে পেনশন পাবেন। সেই কারণে, এটি সরকারের উপর একটি আর্থিক চাপ এড়াতেও সাহায্য করে।