সোমবার দারিদ্র্য দূরীকরণে ভারতের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাল রাষ্ট্রসংঘ। UN-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০০৫-০৬ থেকে ২০১৯-২১ সময়কালের মধ্যে ভারতে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪১.৫ কোটি হ্রাস পেয়েছে। এটিকে একটি 'ঐতিহাসিক পরিবর্তন' বলে অভিহিত করেছে রাষ্ট্রসংঘ। রাষ্ট্রসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (UNDP) এবং অক্সফোর্ড দারিদ্র্য ও মানব উন্নয়ন উদ্যোগ (OPHI) দ্বারা প্রকাশিত বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকে (MPI) এই ফলাফল উঠে এসেছে।
উক্ত প্রতিবেদনে আরও যোগ করা হয়েছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যকে অর্ধেক করার যে লক্ষ্য নিয়ে ভারত এগোচ্ছে, তা যে বৃহত্ স্কেলেও প্রয়োগ করা সম্ভব, তারই প্রমাণ এটি। 'ভারতের এই দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের প্রচেষ্টা একটি গুরুত্বপূর্ণ কেস স্টাডি বলা যেতে পারে। প্রথমত, এর লক্ষ্য হল সমস্ত দারিদ্র্যের অবসান ঘটানো। দ্বিতীয়ত হল, দেশে দারিদ্র্য মাত্রার নিচে বসবাসকারী সমস্ত বয়সের পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের অনুপাতকে অন্তত অর্ধেকে হ্রাস করা। ২০৩০ সালের মধ্যেই,' উল্লেখ করা হয়েছে জাতিসংঘের রিপোর্টে। আরও পড়ুন: Global Hunger Index 2022- মাত্র ৩,০০০ জনের ভিত্তিতে সমীক্ষা, ক্ষুধা সূচক র্যাঙ্কিং প্রত্যাখ্যান কেন্দ্রের
তবে এখনই উদযাপনের সময় আসেনি
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯-২১ সালের হিসাব বলছে, ভারতে এখনও ৯.৭ কোটিরও বেশি দরিদ্র শিশু রয়েছে। অন্য যে কোনও দেশের মোট দরিদ্র শিশুর মোট সংখ্যার থেকে বেশি। তা সত্ত্বেও, এই বহুমুখী নীতি ও পদ্ধতিগুলি এটাই প্রমাণ করছে যে, সমন্বিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে উন্নত করা যেতে পারে,' উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
ভারতের দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রচেষ্টার প্রশংসা করে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত ১৫ বছরে দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসা মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ২৭.৫ কোটি ২০০৫-০৬ সাল থেকে ২০১৫-১৬ সালের মধ্যেই এই অসাধ্য সাধন করেছে। এদিকে ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২১-এর মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি মানুষ দারিদ্র থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
২০১৯-২১-এর ডেটা অনুযায়ী ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ১৬.৪ শতাংশ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করেন। দারিদ্রের গড় তীব্রতা ৪২ শতাংশ।
জনসংখ্যার প্রায় ৪.২ শতাংশ গুরুতর দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেন। এই নাগরিকদের দুই-তৃতীয়াংশ এমন একটি পরিবারে বাস করেন, যেখানে অন্তত একজন ব্যক্তি পর্যাপ্ত পুষ্টি থেকে বঞ্চিত। এই পরিসংখ্যান যে বেশ উদ্বেগজনক তা বলাই বাহুল্য।
শহরের জনসংখ্যার ৫.৫ শতাংশ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করেন। সেই তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় দরিদ্র মানুষের হার ২১.২ শতাংশ। দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ দরিদ্র নাগরিকই গ্রামীণ এলাকায় বাস করেন। মোট ২০.৫ কোটি দরিদ্রের মধ্যে প্রায় ২২.৯ কোটি দরিদ্র মানুষ গ্রামীণ এলাকায় বাস করেন।
বিহার ২০০৫-০৬ সালে সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য ছিল। সেই সময়ে মোট দরিদ্র প্রায় ৭৭.৪ শতাংশ ছিল। সেখান থেকে ২০১৫-১৬ সালে ৫২.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এরপর ২০১৯-২১ সালে ৩৪.৭ শতাংশে নেমে এসেছে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ভারতের রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি জুড়ে, আপেক্ষিকভাবে সবচেয়ে দ্রুত গোয়া, তারপরে জম্মু ও কাশ্মীর, অন্ধ্র প্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে দারিদ্র হ্রাস পেয়েছে।
২০১৫-১৬ সালে দেশের ১০টি দরিদ্রতম রাজ্যের তালিকা থেকে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ বেরিয়ে এসেছেষ ২০১৯-২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ দেশের ১০টি দরিদ্রতম রাজ্যের মধ্যে ছিল না। বাকি বিহার, ঝাড়খণ্ড, মেঘালয়, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, অসম, ওড়িশা, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থান আগের মতোই ১০টি দরিদ্রতম রাজ্যের মধ্যে রয়েছে।