ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ প্রদান করা যায় না। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দায়ের করা ওবিসি মামলায় এমনই মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট। যদিও রাজ্য সরকারের তরফে দাবি করা হয়, 'ধর্মের ভিত্তিতে' কোনও শ্রেণিকে ওবিসি তালিকায় যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বরং ‘অনগ্রসরতার বিচারেই সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর অনগ্ররসতা তো সব সম্প্রদায়ের মধ্যেই থাকে।’ সেইসঙ্গে শীর্ষ আদালতকে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানান রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বল। তিনি দাবি করেন, ২০১০ সালের পর থেকে রাজ্যের জারি করা সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করার যে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট, সেটার ফলে অনেক মানুষ সেই সার্টিফিকেট ব্যবহার করতে পারছেন না। ঝুলে আছে অনেকের নিয়োগ প্রক্রিয়া। যদিও তাতে রাজি হয়নি শীর্ষ আদালত। বরং ২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির ধার্য করা হয়েছে।
রাজ্যের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য ছিল, দাবি সিব্বলের
তারইমধ্যে রাজ্যের আইনজীবী সিব্বল দাবি করেন, কোনও শ্রেণিকে ওবিসি চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য ছিল। কিন্তু তারপরও গত ২২ মে হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছে, সেটার ক্ষেত্রে অন্ধ্রপ্রদেশের রায়ের উপরে অনেকটা নির্ভর করেছে। অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের রায়ে মুসলিম ওবিসিদের সংরক্ষণের বিষয়টি খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। যে নির্দেশে ইতিমধ্যে স্থগিতাদেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
রাজ্যের হাতে কোনও তথ্য ছিল না, পালটা দাবি
যদিও পালটা আইনজীবী পিএস পাটওয়ালিয়া দাবি করেন, হাইকোর্টের রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল যে ওবিসি হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য কোনও সমীক্ষা চালানো হয়নি। কোনও পরিসংখ্যান ছিল। রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণির কমিশনকে এড়িয়ে গিয়ে ২০১০ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বয়ানের পরে সংরক্ষণ প্রদান করা হয়েছিল। হাইকোর্ট বলেছিল যে রাজ্য সরকার সেই কাজটা করতে পারে। কিন্তু সেজন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে।
ত্রিস্তরীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, দাবি করেছিল রাজ্য
হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার যখন সুপ্রিম কোর্টে আসে, তখন ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ৭৭টি শ্রেণিকে (৭৫টি শ্রেণিই মুসলিম) ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে হলফনামা দাখিল করতে বলেছিল শীর্ষ আদালত। রাজ্যের দায়ের করা হলফনামায় দাবি করা হয়েছিল যে ত্রিস্তরীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল বিভিন্ন শ্রেণিকে। দুটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। রাজ্য অনগ্রসর কমিশনে শুনানি হয়েছিল বলে মাসচারেক আগে সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিল রাজ্য। তবে এটাও স্বীকার করে নিয়েছিল যে কয়েকটি মুসলিম শ্রেণির ক্ষেত্রে সেই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ২৪ ঘণ্টার কম সময় লেগেছিল।