পা ধুয়ে ‘পাপ মোচন।’ একুশ শতকে দাঁড়িয়েও সমাজ যে এখনও মারাত্মক ভাবে পিছিয়ে রয়েছে, সম্প্রতি তারই প্রমাণ দিল মধ্যপ্রদেশ। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত (ওবিসি) এক যুবককে দিয়ে জোর করে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ব্যক্তির পা ধোওয়ানো এবং সেই জল পান করতে বাধ্য করার অভিযোগে শোরগোল পড়ে গিয়েছে মোহন যাদবের গড়ে। আর এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, এই ঘটনায় কুশওয়াহা সমাজের এক সদস্যের এফআইআর-র ভিত্তিতে একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বিভিন্ন জাতের মধ্যে সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে, এই আইনের ধারাতেও রুজু হয়েছে মামলা। অভিযোগ, সাতারিয়া গ্রামের বাসিন্দা পুরুষোত্তম কুশওয়াহা জাতিভেদের শিকার হয়েছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, পুরুষোত্তম কুশওয়াহা, ওবিসি সম্প্রদায়ের একজন সদস্য। সমস্ত গ্রামবাসীর সামনে এই ব্যক্তিকেই বাধ্য করা হয়েছে অন্নু পাণ্ডে নামে এক ব্রাহ্মণ ব্যক্তির পা ধুয়ে সেই জল পান করতে। এখানেই শেষ নয়। ৫১০০ টাকা জরিমানাও নেওয়া হয়েছে পুরুষোত্তমের থেকে। সেই সঙ্গে সমগ্র ব্রাহ্মণ সমাজের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে তাঁকে। স্বভাবতই তাঁর অপমানের মাত্রা ঠিক কতটা তা হয়তো আর পাঁচজনের পক্ষে বোঝাও সম্ভব নয়।
ঘটনার সূত্রপাত
একটি গ্রাম্য বিবাদকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত। পুরুষোত্তম এবং অন্নু পাণ্ডে দুজনেই সাতারিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ওই গ্রামে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল মদ। তারপরেও মদ বিক্রি চালিয়ে যেতে থাকেন অন্নু পাণ্ডে। গ্রামবাসীদের কাছে ধরা পড়ার পর জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হয় তাঁকে। একই সঙ্গে ২১০০ টাকা জরিমানাও দিতে হয়। এই অবধি বিষয়টা মেনে নিয়েছিলেন অন্নু। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় একটি ছবিকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ, পুরুষোত্তম এআই ব্যবহার করে অন্নুর একটি ছবি তৈরি করেন। ছবিতে দেখা যায়, অন্নুর গলায় রয়েছে জুতোর মালা। এই ছবি পুরুষোত্তম সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন বলেও অভিযোগ। তবে কয়েক মিনিটের মধ্যে ওই ছবিটি ডিলিট করে নাকি ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন পুরুষোত্তম। কিন্তু গ্রামবাসীরা বলেন, এআই প্রণীত বিকৃত ছবি দিয়ে ব্রাহ্মণ সন্তানকে সর্বসমক্ষে অপমান করেছেন অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) তালিকাভুক্ত পুরুষোত্তম।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রামেরই ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের কিছু লোক একত্রিত হয় দাবি করেন, নিজের কাজের জন্য পুরুষোত্তমকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। চাপের মুখে হাঁটু গেড়ে বসে অন্নুর পা ধুয়ে সেই জল পান করতে বাধ্য হন পুরুষোত্তম। সেই ভিডিও-ই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর, অন্নু ও পুরুষোত্তম দু'জনেই ক্ষোভ প্রশমিত করার চেষ্টা করেছিলেন। ঘটনা জানাজানি হতেই পুরুষোত্তম সকলকে ভাইরাল ফুটেজটি ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে ফেলার আবেদন জানান। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, 'আমি ভুল করেছি, এবং আমি ক্ষমা চেয়েছি। অন্নু পাণ্ডে আমার পরিবারের গুরু। দয়া করে এটিকে রাজনৈতিক করে তুলবেন না।' অন্নু পাণ্ডেও ঘটনাকে 'পারস্পরিক' বিষয় বলে অভিহিত করে জানান সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, 'কিছু লোক এটিকে রাজনীতিকরণ করছে। আমাদের মধ্যে একটি গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক রয়েছে। আমি তাঁকে অপমান করিনি। পুরুষোত্তম যা করেছে তা স্বেচ্ছায় করেছিল।' ঘটনাটিকে স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, মর্মান্তিক দৃশ্যগুলি গ্রামীণ ভারতের সামাজিক কাঠামোর মধ্যে এখনও গভীরভাবে প্রোথিত জাতি বৈষম্যের কথাই তুলে ধরেছে।