অসমের হাসপাতালে মৃত ওডিশার ফুটবলারের দেহ পেলেন না স্ত্রী। পরিবর্তে দেহ নিয়ে গেলেন মিজোরামের এক মহিলা। ঘটনায় হতভম্ব নিহতের পরিবার।
গত ১০ জুন সকালে শিলচরের এক হাসপাতালে মারা যান ওডিশার গঞ্জাম জেলার জনপ্রিয় মিডফিল্ডার নরেশ আউলা (৩৪)। ২০০৯ সাল থেকে তিনি ওএনজিসি সংস্থায় নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত ছিলেন। দুই বছর আগে তাঁকে অসমের শিলচরে নিয়োগ করা হয়।
মৃত্যুর আগের রাতে তিনি ওডিশার ভঞ্জনগরে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন বলে জানিয়েছেন নরেশের দাদা বিষ্ণু আউলা। বাড়ি ফেরার ইচ্ছা জানালে ভাইকে তিনি বলেন, এই সময় ভিনরাজ্য থেকে ফিরলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে, তাই পরিকল্পনা বাতিল করতে।
পরের সকালে হাসপাতাল থেকে ফোনে নরেশের মৃত্যু সংবাদ জানানো হয় ভঞ্জনগরের বাড়িতে। শোকে ভেঙে পড়েন নরেশের স্ত্রী আরতি, ৪ বছর বয়েসি মেয়ে, নরেশের বাবা-মা ও ভাই-বোন। কিন্তু তাঁদের জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল।
মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ওএনজিসি-র দফতরে মৃতদেহ ওডিশায় ফেরত পাঠানোর জন্য আবেদন জানালে পরিবারকে বলা হয় যে, হাসপাতাল থেকে ইতিমধ্যে নরেশের দেহ নিয়ে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী পরিচয় দেওয়া মিজোরামের এক মহিলা। তবে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে নিহত ফুটবলারকে সমাধিস্থ করার দৃশ্য দেখার অনুমতি দেওয়া হবে পরিবারকে।
এই কথায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে বাড়ির সকলের। বিষ্ণু জানিয়েছেন, ২০১২ সালে আরতির সঙ্গে নরেশের বিয়ে হয়। তাঁদের এক কন্যা সন্তানও রয়েছে। সেই বিয়ের ভিডিয়ো ক্লিপিং এবং সন্তানের ছবি দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের সাহায্য চেয়ে আবেদন জানায় নরেশের পরিবার।
শেষ পর্যন্ত ১১ জুন রাতে তাঁদের জানানো হয়, হাসপাতাল থেকে ওই দিন সকালে দেহ নিয়ে গিয়েছেন মিজোরামবাসী এক মহিলা। তিনি নিজেকে নরেশের স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়েছেন। ওএনজিসি-র নথিতে ওই মহিলাকেই নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন নিহত নরেশ।
নরেশের বাবা আলাবান্দ্রু আউলা জানিয়েছেন, গোটা ঘটনায় তাঁরা স্তম্ভিত। বিষয়টি নিয়ে এবার তাঁরা কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন।
বিষ্ণু আউলা অবশ্য জানিয়েছেন, চার বছর আগে নরেশের জীবনে দ্বিতীয় নারীর আবির্ভাবের কথা তাঁদের কানে এসেছিল। তাই নিয়ে প্রশ্ন করলে বরাবরই এড়িয়ে গিয়েছেন নরেশ, দাবি তাঁর দাদার। এই কারণেই গত দেড় বছরে একবারও বাড়ি ফেরেননি ওএনজিসি কর্মী, দাবি পরিবারের। প্রশ্ন করলেই তিনি কাজের চাপের কথা বলতেন বলে জানা গিয়েছে।
ফুটবলার হিসেবে বরাবরই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন নরেশ। ওএনজিসি-র হয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার আগে ওডিশা রাজ্য ফুটবল দলের নিয়মিত সদস্য হিসেবে তিন বার সন্তোষ ট্রফিতেও তিনি মাঠে নামেন।
তাঁর মৃতদেহ ঘিরে জটিলতার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন এক ওএনজিসি কর্তা, দাবি পরিবারের।