আড়াই দশকেরও বেশি সময় আগে ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ তুলে অস্ট্রেলিয়ান মিশনারি গ্রাহাম স্টেইন্স এবং তাঁর দুই নাবালক সন্তানকে পুড়িয়ে মারার মামলায় বড় সিদ্ধান্ত নিল ওড়িশার বিজেপি সরকার। সেই খুনের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি মহেন্দ্র হেমব্রমকে মুক্তি দিল রাজ্য সরকার। জেলে ভালো আচরণের জন্য স্টেট সেন্টেন্স রিভিউ বোর্ড তাঁকে মুক্তি দিয়েছে। হেমব্রমের মুক্তি ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ হেমব্রমের মুক্তিকে স্বাগত জানালেও কংগ্রেস এর তীব্র বিরোধিতা করে ‘ন্যায় বিচারের উপর কালো দাগ’ বলে কটাক্ষ করেছে।
আরও পড়ুন: বড়লোক হওয়ার বাসনা, মা-মেয়েকে খুন করল দুই ভাই,হোয়াটস অ্যাপে লিখল…
ওড়িশার মোহনপুরে স্টেশন ওয়াগনে গ্রাহাম ও তাঁর ১০ এবং ৭ বছরের ছেলেকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল। সেই মামলায় হেমব্রমকে ১৯৯৯ সালের ৯ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয়। তবে মামলার প্রধান ষড়যন্ত্রকারী দারা সিং পালিয়ে যান। পরে দারা সিংকে ২০০০ সালের ৩১ জানুয়ারি পুলিশ গ্রেফতার করে। এই খুনের ঘটনায় প্রথমে নিম্ন আদালত তাঁদের যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করে। পরে ওড়িশা হাইকোর্ট সাজা বহাল রাখে। তাঁরা দুজনেই গত ২৫ বছর ধরে কেওনঝার জেলের আলাদা কক্ষে বন্দি।
জেলার মনস্বিনী নায়েক জানিয়েছেন, ভালো আচরণের কারণে বোর্ড হেমব্রমের মুক্তির আদেশ দিয়েছে। ১৪ বছর ধরে জেলে থাকা আসামিদের মুক্তি দেওয়ার নীতির অংশ হিসেবে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তিনি তিন খুনের ঘটনাকে ধর্মান্তরের সঙ্গে যুক্ত বলে জানান। এদিকে, দারা সিংও মুক্তির আবেদন জানিয়েছেন। এবিষয়ে ৬ সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে ওড়িশা সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। উল্লেখ্য, দারা সিংয়ের বিরুদ্ধে একজন মুসলিম ব্যবসায়ীকেও হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে মনোহরপুরে বাইবেলের শিক্ষা প্রচারের জন্য একটি শিবিরে যোগ দেন স্টেইন্স। রাতে ঘুমানোর সময় তাঁদের পুড়িয়ে মারা হয়। অভিযোগ ওঠে, পুড়িয়ে মারার সময় দারা সিং ‘জয় বজরং বালি’ এবং ‘দারা সিং জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেওয়া কয়েকজনের নেতৃত্ব দেন। এই হত্যাকাণ্ডের পরে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের জন্ম দেয়। ঘটনায় কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত করে। এই খুনের ঘটনায় যুক্ত ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড থেকে শুরু করে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল আদালত।
তাঁর মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক কেদার দাস বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি শুভ দিন। আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।’ অন্যদিকে, হেমব্রমের মুক্তির পরই সরব হয়েছে বিরোধী কংগ্রেস বিধায়ক মানিকম ঠাকুর। তিনি এই মুক্তিকে ভারতীয় ন্যায়বিচারের উপর একটি কালো দাগ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘একজন নিম্ন মানসিকতার খুনি যিনি গ্রাহাম স্টেইনস এবং তাঁর দুই নাবালক ছেলেকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিলেন, তিনি এখন মুক্ত। মহেন্দ্র হেমব্রমের মুক্তি সংঘীদের জন্য উদযাপন, কিন্তু ভারতীয় ন্যায়বিচারের উপর একটি কালো দাগ। এটি কী বার্তা পাঠায়?’ তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।