ভগবদ্গীতার বাণী উদ্ধৃত করে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রুজু হওয়া ফৌজদারি মামলা খারিজ করে দিল ওডিশা হাইকোর্ট।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই মামলা রুজু করা হয়েছিল, তিনি ভুলবশত জমি অধিগ্রহণের আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন। কারণ, আদতে যাঁর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল - সেই ব্যক্তির নাম, বাবা-মায়ের পরিচয় এবং ঠিকানার সঙ্গে ভুলবশত ক্ষতিপূরণ পাওয়া ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিবরণের মিল রয়েছে।
কিন্তু, ভুলের বিষয়টি সামনে আসার পরই ক্ষতিপূরণ পাওয়া ব্যক্তিটি সেই টাকা ফিরিয়ে দেন। সংশ্লিষ্ট মামলার আবেদনকারীও তিনি। যিনি ফৌজদারি অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতী চেয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
ওডিশা হাইকোর্টের বিচারপতি শিব শংকর মিশ্রা সবটা জানার পর আবেদনকারীকে তাঁর বিরুদ্ধে রুজু হওয়া ফৌজদারি মোকদ্দমা থেকে মুক্তি দেন এবং মামলাটি খারিজ করেন।
এই বিষয়ে আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলে, 'হাতে পাওয়া টাকা যদি কেউ ফেরত দেন, বিশেষ করে যেখানে তিনি সেই অর্থ ভুলবশত লাভ করেছেন, তা আদতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আন্তরিকতার পরিচয় দেয়। এটি কেবলমাত্র তাঁর সততার প্রতিফলনই নয়, নৈতিক দায়িত্ববোধেরও প্রতিফলন ঘটায়। আইনি ও নৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করে এবং এটা প্রমাণ করে যে ওই ব্যক্তির অন্য়ায় উপার্জনের প্রতি কোনও লোভ বা এই ধরনের কোনও উদ্দেশ্য নেই। এমনকী ভগবদ্গীতাতেও বলা হয়েছে, আন্তরিক অনুশোচনা ও ভক্তির পর অপরাধবোধের উপলব্ধি মুক্তি ও শান্তির পথে ব্যক্তিকে পরিচালিত করে!'
মামলা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সালের ভ্রমরাবর মোহান্তি নামে এক ব্যক্তি তাঁর ছেলে অরুণকুমার মোহান্তির নামে দু'টি জমি কেনেন। যার মোট আয়তন ১.১২ একর। সেই জমি ২০০৪ সালে সরকারের তরফে অধিগ্রহণ করা হয়। এবং এর আর্থিক ক্ষতিপূরণ বাবদ অরুণকুমার মোহান্তিকে ১৭.৭২ লক্ষ টাকা পাঠানো হয়।
কিন্তু, পরবর্তীতে অরুণকুমার মোহান্তি নামে অন্য এক ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করে জানান, তিনিই ওই জমির আসল মালিক এবং তিনি জমি অধিগ্রহণের জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি।
এরপর যে ব্যক্তি সেই ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন, তাঁকে নোটিশ পাঠিয়ে গোটা ঘটনা জানানো হয়। এবং ২০১৩ সালে সেই ব্যক্তি ভুলবশত হাতে পাওয়া ক্ষতিপূরণের টাকা ফিরিয়ে দেন। কিন্তু, তার আগেই তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু হয়ে গিয়েছে! ২০১৫ সালের অগস্ট মাসে এই মামলার চার্জশিটও পেশ করা হয়।
এরপর নিম্ন আদালতে মামলা করেন অভিযুক্ত অরুণকুমার মোহান্তি এবং ফৌজদারি অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতী চান। কিন্তু, নিম্ন আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর বাধ্য হয়েই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই ব্যক্তি। অবশেষে সেখানেই মামলা থেকে মুক্তি পান অরুণকুমার মোহান্তি।