যদি কোনও ব্যক্তি তাঁর অতীত অপরাধের তথ্য গোপন করেন, অথবা চাকরি পাওয়ার জন্য নকল নথি পেশ করেন, তাহলে ভবিষ্যতে সেইসব তথ্য প্রকাশ্যে এলে তিনি তাঁর চাকরি বা নিয়োগের অধিকার হারাবেন। স্পষ্টভাবে এই রায় দিল ওডিশা হাইকোর্ট।
সংশ্লিষ্ট একটি মামলা প্রসঙ্গে এই রায় দিয়েছে ওডিশার উচ্চ আদালত। টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এই মামলাটির শুনানি চলছিল বিচারপতি এস কে পাণীগ্রাহীর বেঞ্চে।
মামলাকারী ব্যক্তি এনএলসি ইন্ডিয়া লিমিটেড নামক একটি কোম্পানিতে জুনিয়র ওভারম্যান (ট্রেনি) পদে নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু, পরবর্তীতে তাঁর চাকরি চলে যায়। সোজা কথায় তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
সংস্থার সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হন চাকরি হারানো ওই ব্যক্তি। ওডিশা হাইকোর্টে মামলা রুজু করেন তিনি।
মামলা সূত্রে জানা গিয়েছে, চাকরি হারানো ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে তিনটি এফআইআর ঝুলে রয়েছে। তিনি যখন চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন, সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাননি। পরে বিষয়টি সামনে আসায় সংস্থা তাঁকে বরখাস্ত করে।
সেই মামলায় হাইকোর্টের বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, 'তাঁর নামে যে এফআইআর করা হয়েছিল, এবং সেকথা যে তিনি সংস্থার কাছে লুকিয়েছিলেন, এটা নীতিবিরুদ্ধ। এবং এতে ওই চাকরিপ্রার্থীর সততা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।' গত ২৪ ডিসেম্বর আদালতের এই অর্ডার রিলিজ করা হয়।
অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে আদালতে যুক্তি পেশ করা হয়, কোনও অবস্থাতেই বরখাস্ত হওয়া ওই কর্মীকে কাজে ফেরানো সম্ভব নয়। কারণ, সংস্থার নিয়ম অনুসারে, প্রথমেই লিখিতভাবে প্রার্থীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে যদি কোনও ফৌজদারি মামলা কিংবা এফআইআর থাকে, তাহলে তাঁকে সেই তথ্য আগেভাগেই পেশ করতে হবে। অন্যথায় তাঁকে বরখাস্ত করা হবে।
সংস্থার যুক্তি, ওই ব্যক্তি এই পরিণতি জানা সত্ত্বেও নিজের সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এইসব তথ্য গোপন করেছেন। ফলত, তাঁকে পুনরায় চাকরিতে বহাল করা সম্ভব নয়।
দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, 'যদিও সংশ্লিষ্ট এফআইআর-গুলির ভিত্তিতে আবেদনকারীর শাস্তি হয়নি, কিংবা আদালত তাঁকে গ্রেফতার করতে বলেনি, তবুও তাঁর এই তথ্য পেশ করার কথা ছিল। ফলত, মামলাকারী এখানে নিয়মভঙ্গ করেছেন।'
আদালতের মতে, এই ধরনের বস্তগত তথ্যাবলী, যার মধ্যে ফৌজদারি মামলায় যুক্ত থাকার মতো গুরুতর বিষয় রয়েছে, তা নিয়োগকারীকে প্রথমেই জানিয়ে দিতে হবে। কিন্তু, তিনি যদি তেমনটা না করেন, তাহলে তিনি তাঁর নিয়োগের অধিকার হারাবেন।