পথচারীর পকেট থেকে পড়ে যাওয়া মানিব্যাগ ফিরিয়ে দিতে ২০০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে মানবিকতার নজির গড়লেন ভুবনেশ্বরের নিরাপত্তারক্ষী মদবীর খান।
মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতরের অধীনস্থ এক বেসরকারী সংস্থায় মাত্র একমাস আগে বহাল হয়েছেন বছর পঁয়ত্রিশের মদবীর খান। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাজ শেষ করে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে ভুবনেশ্বরের বহুতল কমপ্লেক্স ফরচুন টাওয়ার্সের সামনে রাস্তার পাশে একটি ওয়ালেট পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। ওই ব্যাগে ককে হাজার টাকার সঙ্গে জনৈক জ্যোতিপ্রকাশ রামের ডেবিট, ক্রেডিট ও আধার কার্ড মেলে।
পুলিশ জানিয়েছে, পেশায় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জ্যোতিপ্রকাশ কর্মসূত্রে জামশেদপুর থেকে ভুবনেশ্বরে এসেছিলেন। ওই দিন বিকেলে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দোকান থেকে তিনি খাবার কিনে খেয়েছিলেন। সেই সময় পকেট থেকে কোনও ভাবে তাঁর ওয়ালেটটি পড়ে যায়।
ব্যাগের কোনও নথিতে জ্যোতিপ্রকাশের ফোন নম্বর না পাওয়ায় ধন্দে পড়েন মদবীর। আধার কার্ডে অবশ্য তাঁর বাড়ির ঠিকানা পাওয়া যায়। জানা যায়, তিনি ওডিশার কেওনঝড় জেলার ফকিরপুর গ্রামের বাসিন্দা। ব্যাগ ফেরাতে তাই রাতেই কেওনঝড়ের বাসে সওয়ারি হন মদবীর।
মঙ্গলবার গভীর রাতে কেওনঝড়ের আনন্দপুর শহরে পৌঁছে ফকিরপুরে যাওয়ার কোনও গাড়ি না পেয়ে শেষে বাসস্ট্যান্ডেই রাত কাটান কর্তব্য়ে অটল এই যুবক। বুধবার ভোর হলে স্থানীয় এক তরুণের মোটরবাইকের পিছনে বসে পৌঁছে যান ফকিরপুর থেকে ৩ কিমি দূরে। সেখান থেকে হেঁটে গ্রামে পৌঁছন।
যাওয়ার পথে জ্যোতিপ্রকাশের এক বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হয় মদবীরের। সব শুনে তিনি ফোন করে হারানো ব্যাগ পুনরুদ্ধারের কথা জানান তাঁর বন্ধুকে। জ্যোতিপ্রকাশের বাড়ি পৌঁছে তাঁকে মানিব্যাগ হস্তান্তর করেন মদবীর। তবে অনেক পীড়াপীড়িতেও তিনি কোনও পুরস্কার নিতে রাজি হননি। অনেক কষ্টে তাঁকে যাতায়াতের খরচটুকু দিতে পেরেছেন ওই চিকিত্সকের পরিবার।
এ নিয়ে মদবীর খানের বক্তব্য, ‘বড় কোনও কাজ তো করিনি। আমারও একবার মানিব্যাগ হারিয়েছিল বলেই জানি, কী অসম্ভব উদ্বেগের মধ্যেই না ছিলেন ব্যাগটির মালিক।’
ওডিশার আঠাগড় বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পাংকালা গ্রামের ছেলে মদবীরের মাসিক বেতন ১০,৫০০ টাকা। প্রতি মাসে তার থেকে ৪ হাজার টাকা তিনি বাড়িতে পাঠান। তাঁর কীর্তিতে গর্ব প্রকাশ করেছেন মদবীরকে নিয়োগকারী সংস্থার আধিকারিক সম্বিত্ মিশ্র।