জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে জাতিসংঘে প্রথম ভাষণে শলৎস ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার তীব্র নিন্দা করে গোটা বিশ্বকে সতর্ক করে দিলেন৷ জোর খাটিয়ে জমি দখলের ঘোর বিরোধিতা করলেন তিনি৷ ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা জার্মানি তথা ইউরোপকে কত বড় ধাক্কা দিয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে ওলাফ শলৎসের প্রথম ভাষণ তা স্পষ্ট করে দিলো৷ শলৎস রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে ‘নির্লজ্জ সাম্রাজ্যবাদ'-এর অভিযোগ করেছেন৷ তার মতে, পুতিন যদি বুঝতে পারেন তার পক্ষে এই যুদ্ধ জয় করা সম্ভব নয়, তবেই তিনি তার ‘সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা' ত্যাগ করবেন৷
শলৎস মনে করেন, পুটিন শুধু ইউক্রেন নয়, নিজের দেশকেও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন৷ তিনি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই সংকটের সমাধানের লক্ষ্যে উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া শান্তি মোটেই গ্রহণযোগ্য হবে না৷ শলৎস বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আচরণ শুধু ইউরোপের জন্যই বিপর্যয় বয়ে আনছে না, আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক কাঠামো ও বিশ্ব শান্তিও বিঘ্নিত হচ্ছে৷ তিনি এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেন, যে গত মার্চ মাসে জাতিসংঘের ১৪১টি সদস্য দেশ একটি প্রস্তাব সমর্থন করে রুশ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল৷ শলৎস জাতিসংঘের উদ্দেশ্যে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক কাঠামোর সুরক্ষার আহ্বান জানান৷ ‘জোর যার মুলুক তার' নীতি যাতে বিশ্বে জাঁকিয়ে বসতে না পারে, তা নিশ্চিত করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন৷ জার্মান ও ইউরোপীয় হিসেবে তিনি নিজে একবিংশ শতাব্দীতে বহুমেরুভিত্তিক ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন, বলেন জার্মান চ্যান্সেলর৷
রাশিয়ার আগ্রাসন রুখতে ইউক্রেনের প্রতি সম্পূর্ণ সংহতি ও ধারাবাহিক সহায়তার অঙ্গীকার করেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ তিনি আন্তর্জাতিক সমাজের উদ্দেশ্যে ইউক্রেনের জন্য আর্থিক, অর্থনৈতিক, মানবিক এবং সামরিক সহায়তার আহ্বান জানান৷ উল্লেখ্য, চ্যান্সেলর শলৎস নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগেই জার্মান সরকার ইউক্রেনের জন্য আরও সামরিক সহায়তার ঘোষণা করেছে৷ এর আওতায় জার্মান সেনাবাহিনীর ভাণ্ডার থেকে আরও ‘সেল্ফ প্রপেল্ড হাউইৎসার' কামান ইউক্রেনে পাঠানো হবে৷ জাতিসংঘের ভাষণে শলৎস আরও জানান, আগামী ২৫ অক্টোবর বার্লিনে ইউক্রেনের পুনর্গঠন সংক্রান্ত একটি সম্মেলন আয়োজন করা হবে৷ সেখানে জার্মানি ইউক্রেনের সরকারকে সে দেশের পুনর্গঠনের কাজে বিপুল সহায়তার উদ্যোগ নেবে৷
ইউক্রেনের প্রতি জোরালো সমর্থনের অঙ্গীকার করলেও সে দেশকে আক্রমণাত্মক সামরিক সরঞ্জাম দেওয়ার প্রশ্নে এখনও দ্বিধায় ভুগছেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ ন্যাটো-সহ অন্যান্য সহযোগীদের সঙ্গে সমন্বয় ছাড়া জার্মানির পক্ষে এমন ‘ঝুঁকিপূর্ণ' পদক্ষেপ করতে তিনি নারাজ৷ এদিকে জার্মান সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে ইউনিয়ন শিবির এই মর্মে একটি প্রস্তাব আনার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ ইউরোপে ‘শান্তি ও স্বাধীনতা' রক্ষার স্বার্থে ইউক্রেনকে ভারি অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর দাবি করছে জার্মানির রক্ষণশীল দুই দল৷ সরকারি জোটের মধ্যেও এমন দাবি ওঠায় বিরোধী পক্ষের প্রস্তাব প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)