লটারির টিকিটের উপরে শুধুমাত্র রাজ্য সরকারই কর চাপাতে পারবে। কেন্দ্রীয় সরকারের সেই এক্তিয়ার নেই বলে জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। লটারির ডিস্ট্রিবিউটরদের উপরে পরিষেবা কর চাপানোর যে চেষ্টা করছিল কেন্দ্রীয় সরকার, তা খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি বিভি নাগরত্না এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্রের ডিভিশন বেঞ্চ। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, সংবিধানের রাজ্যের তালিকাভুক্ত বিষয়ের মধ্যে 'বাজি এবং জুয়া খেলা'-র মধ্যে লটারির বিষয় আছে। যেটার অর্থ হল যে লটারির উপরে কর চাপানো বা লটারির বিষয়ে কর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ক্ষমতা শুধুমাত্র রাজ্যের হাতে আছে।
কেন্দ্রের তরফে কী যুক্তি দেওয়া হয়েছিল?
আর সুপ্রিম কোর্টের তরফে সেই রায় দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের পদক্ষেপের পরে। যে সংস্থাগুলি লটারি টিকিটের বণ্টন ও মার্কেটিংয়ের কাজে নিযুক্ত থাকে, সেগুলির উপরে পরিষেবা কর চাপানোর চেষ্টা করছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, এরকম যে কাজকর্ম করা হয়, তা অর্থ আইনের আওতায় করযোগ্য পরিষেবা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যদিও সেই যুক্তি খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের মতে, রাজ্য সরকার এবং লটারির ডিস্ট্রিবিউটরদের মধ্যে লেনদেনদের ক্ষেত্রে কোনও পরিষেবার ব্যাপার নেই। এখানে রাজ্য সরকার এবং ডিস্ট্রিবিউটরদের মধ্যে সম্পর্কটা 'প্রিন্সিপাল টু প্রিন্সিপাল' (দু'পক্ষ স্বাধীনভাবে কাজ করে, একপক্ষ অপর পক্ষের পদক্ষেপের জন্য দায়ী থাকে না)। এখানে সম্পর্কটা 'প্রিন্সিপাল টু এজেন্ট'-র নয়। আর সেটার অর্থ হল যে পরিষেবা কর চাপানো যায় না।
বারবার পরিষেবা কর বসানোর চেষ্টা করেছে কেন্দ্র
এমনিতে একাধিকবার লটারি সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডকে পরিষেবা করের আওতায় আনতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেজন্য ১৯৯৪ সাল, ২০১০ সাল এবং ২০১৫ সালে অর্থ আইনের সংশোধনও করেছে। যদিও তা সফল হয়নি। ২০১২ সাল এবং ২০১৫ সালে খারিজ করে দিয়েছিল সিকিম হাইকোর্ট। যে বিষয়টা এখন বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। ফিউটার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস এবং সামিট অনলাইন ট্রেড সলিউশনসের মতো সংস্থার বিরুদ্ধে কেন্দ্র যে আবেদন করেছিল, সেই মামলার প্রেক্ষিতেই এমন রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
একাধিক রাজ্যে অবশ্য লটারি নিষিদ্ধ
এমনিতে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, সিকিম, নাগাল্যান্ডের মতো রাজ্যে লটারিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। যেখান থেকে রাজ্য সরকারের কোষাগারে টাকা ঢোকে। তবে নেশা ও আর্থিক ঝুঁকির কারণে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে লটারির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, লটারির অনুমোদন দেওয়া হবে কিনা, সেটা নির্ধারণের সম্পূর্ণ অধিকার রাজ্য সরকারের হাতে আছে।