আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সংস্থা ওপেনএআই-তে কাজ করা হুইসেলব্লোয়ার সুচির বালাজির মৃত্যু নিয়ে রহস্য মিটছে না। এরই মাঝে এবার সুচির বালাজির ঘরের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। সাংবাদিক জেমস লি সেই সব ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে পুলিশি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর প্রকাশিত ছবিগুলির বেশ কয়েকটিতে দেখা গিয়েছে, ফ্ল্যাটের মেঝে এবং দেওয়ালে রক্তের দাগ আছে। এর মধ্যে একটি ছবিতে চুলের গোছা দরজার নীচে আটকে আছে বলে দাবি করেন জেমস। এদিকে সুচিরের ফ্ল্যাটে একটি বাটিতে আধ খাওয়া পাত্র পড়ে ছিল বলেও দাবি করেন জেমস। এদিকে সুচিরের ফ্ল্যাটে একটি নতুন কেনা বন্দুক এবং গুলির কেল পাওয়া যায় বলে জানান জেমস। উল্লেখ্য, পুলিশ নাকি তদন্ত শুরু করতে না করতেই সুচির বালাজির মৃত্যুকে আত্মহত্যা আখ্যা দিয়ে দেয়। তবে ফ্ল্যাটের ছবি দেখিয়ে জেমস দাবি করেছে, এই মৃত্যু হয়ত আত্মহত্যা নয়। (আরও পড়ুন: বন্ধ নিজেদের অনুদান, তবুও ট্রাম্পকে 'ধন্যবাদ' জানাল বাংলাদেশ, ইউনুসের সরকার বলল…)
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের শুল্ক জুজুতে মথা নত, 'সব শর্ত মেনে' অবৈধ অভিবাসীদের ফেরাল কলম্বিয়া
ক'দিন আগেই মার্কিন মুলুকে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইঞ্জিনিয়ার সুচির বালাজির। সেই নিয়ে সুচিরের বাবা-মা দাবি করেন, সুচির শীঘ্রই ওপেনএআই-এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে চলেছিল। তাঁদের আরও অভিযোগ ছিল, সুচিরের ফ্ল্যাটে ধস্তাধস্তির চিহ্ন ছিল। ইন্ডিয়া টুডেকে সুচিরের মা পূর্ণিমা বলেছিলেন, 'ওর ফ্ল্যাটে বাথরুমে মারামারির চিহ্ন ছিল। সেখানে রক্তের ছিঁটে দেখতে পেয়েছিলাম। এবং যখন আমরা রক্তের ছিঁটের সেই ছবিটি চ্যাটজিপিটি-তে দিই, তখন আমরা দেখতে পেলাম যে মৃত্যুর কারণ যা বলা হচ্ছে, তার সাথে রক্তের ছিঁটের মিল নেই। আমরা বাথরুমে অন্য জায়গায় রক্তের দাগও পেয়েছি। যা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, আমার ছেলেকে আঘাত করা হয়ে থাকতে পারে। কোনও সুইসাইড নোটও তো ছিল না।' (আরও পড়ুন: 'বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশোধ'! পার্টনারের ২ সন্তানকে খুন করে দেহ ঝুলিয়ে দিলেন বৃদ্ধ)
আরও পড়ুন: ব্রহ্মপুত্রে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধে উদ্বেগ, চিনে গিয়ে বাংলাদেশি উপদেষ্টা বলেন…
কে ছিলেন সুচির বালাজি?
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৪ বছর ওপেনএআই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সুচির। তিনি ওপেনএআই সংস্থার বিরুদ্ধে হুইসেলব্লোয়ারের কাজ করেছিলেন। তিন মাস আগেই সুচির দাবি করেছিলেন, মার্কিন কপিরাইট নিয়ম ভেঙে চ্যাটজিপিটি তৈরি করেছিল ওপেনএআই। উল্লেখ্য, ২০২২ সাল থেকেই বহু সাংবাদিক, লেখক ওপেনএআই-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল যে তাঁদের কপিরাইট থাকা কনটেন্ট বেআইনি ভাবে ব্যবহার করে নিজেদের প্রোগ্রাম ডেভেলপ করেছে ওপেনএআই। (আরও পড়ুন: সামরিক কর্তাদের সফরের পর এবার পাকিস্তানের পথে বাংলাদেশি নৌবাহিনীর জাহাজ)
সুচির বালাজি কী বলেছিলেন?
গত ২৩ অক্টোবর নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সুচির দাবি করেছিলেন, যে সব ব্যবসা বা ব্যবসায়ীদের তথ্য ব্যবহার করে চ্যাটজিপিটি-কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, সেই সব ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে ওপেনএআই। মার্কিন সংবাদপত্রকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই তরুণ বলেছিলেন, 'আমি যা বিশ্বাস করি, তা যদি অন্য কেউও বিশ্বাস করে থাকে, তাহলে তাঁরও কোম্পানি ছেড়ে দেওয়া উচিত। এটা দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীল ইন্টারনেট ইকোসিস্টেমের মডেল হতে পারে না।' (আরও পড়ুন: ভারতে এই প্রথম কোনও রাজ্যে কার্যকর হল অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, বদলাবে কোন সব নিয়ম?)
সুচির বালাজির মৃত্যু নিয়ে রহস্য
উল্লেখ্য, জানা গিয়েছে, সুচিরের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল গত ২৬ নভেম্বর। স্যান ফ্রান্সিস্কোর বুকানান স্ট্রিটে একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন সুচির। সেখানেই 'ওয়েলফেয়ার চেক'-এর জন্যে আবেদন এসেছিল। দুপুর ১টা নাগাদ সেখানে পৌঁছেছিলেন মেডিক্যাল পরীক্ষকরা। সেখান থেকেই মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সুচিরকে। যদিও সেই সময় মেডিক্যাল পরীক্ষকরা তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি। এদিকে প্রাথমিক ভাবে সুচিরের মৃত্যুকে আত্মহত্যার ঘটনা বলেই মনে করছে পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, প্রাথমিক তদন্তে কোনও ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলেনি। জানা গিয়েছে, ২৬ বছর বয়সি সুচির ওপেনএআই সংস্থায় যোগ দেন ২০২০ সালের নভেম্বরে। ২০২৪ সালের অগস্ট পর্যন্ত সেখানে গবেষক হিসাবে কাজ করেছিলেন তিনি। চ্যাটজিপিটি নিয়ে দেড় বছরের বেশি সময় কাজ করেছিলেন সুচির। এই আবহে তিনি মুখ খোলার পরে কয়েক মাসের মধ্যেই মারা যাওয়ায় জল্পনা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে ইলন মাস্কও একটি পোস্ট করেছিলেন সুচিরের মৃত্যু নিয়ে। তাতে তিনি শুধু 'হুমম' লিখেছেন। উল্লেখ্য, ওপেনএআইয়ের প্রধান স্যাম অল্টম্যানের সঙ্গে মাস্কের বিরোধের কথা অনেকেরই জানা।