আলোচনায় এখন সুজন৷ যাঁরা জানেন, তাঁরা জানেন, ক্রিকেটার খালেদ মাহমুদই, শুধু নন আমাদের রেলমন্ত্রীও সুজন, নুরুল ইসলাম সুজন৷
আমাদের এই সুজনটি মাত্রই গত বছর বিয়ে করেছেন। তাই তিনি প্রায় আনকোরা নতুন জামাই৷ শ্বশুরবাড়ির মানুষ জনকে ইমপ্রেস করাটা নতুন জামাই এর জন্য একধরনের কর্তব্যই৷
খবরে জানা গেল, রেলমন্ত্রীর স্ত্রী'র ভাগ্নে বিনা টিকিটে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় রেলভ্রমণ করছিলেন। টিটিই এসে তাঁদের জরিমানা করেন। আর কামরা থেকে বের করে দেন৷ গত বৃহস্পতিবার রাতের এ ঘটনার পর ওই টিটিইকে মোবাইলে বরখাস্ত করার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়৷ শুক্রবার তিনি আর কাজে যোগ দিতে পারেননি৷
আরও পড়ুন: Shakib Al Hasan: খেলা এলেই শাকিবের সমস্যার শুরু: নাজমুল হাসান পাপন
স্ত্রী'র ভাগ্নে মানে রেলমন্ত্রীর শালা বা সম্বন্ধীর সন্তান৷ বুঝলেন কিনা? মন্ত্রীর শ্যালকের ছেলে জেনেও টিটিই যে হঠাৎ কর্তব্যপরায়ণ হয়ে উঠলেন, সেটিও পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে৷ আমাদের রেলের কামরায় কামরায় এরকম টিটিই থাকলে বিনা পয়সায় ভ্রমণ একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা৷
সে যাক, শালা বা সম্বন্ধীর ছেলেদের বিষয়ে মন্ত্রীর কাছ থেকে এখনও কিছু শুনিনি আমরা। তবে সুজন-সখা হয়ে কথা বলেছেন, পশ্চিম রেলের পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন। তিনি দৈনিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরিমানা করার জন্য তাঁকে বরখাস্ত করা হয়নি৷ তাঁর বিরুদ্ধে তিন যাত্রীকে হয়রানি ও অশোভন আচরণ করার অভিযোগ পাওয়ায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে (বিতর্কের মধ্যে অবশ্য বরখাস্তের নির্দেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে)৷’
বাহ। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বরখাস্ত! ওই অভিযোগ কে করল মশাই, মন্ত্রীর শালা বা সম্বন্ধীর পুত্ররা তো, তাই না? রেলের বিনা টিকিটের যাত্রীরা টিটিইর বিরুদ্ধে তো অভিযোগ করতেই পারেন। তাই বলে রাত পোহাতে পারল না তিনি বরখাস্ত!
রেল কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, ওই টিটিইকে নাকি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হচ্ছে৷ যথাযথ জবাব দিতে পারলে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হতে পারে। আশার সংবাদ, কী বলেন?
সুজন সাহেবের শ্যালকের ছেলেদের সঙ্গে কীরকম আচরণ করতে হবে, তার একটা গাইডলাইন নিশ্চয়ই তৈরি করে রাখবেন মাননীয় কর্মকর্তারা৷ রেল ভবনের শীততাপে বসে মাথা না ঘামিয়ে পয়েন্ট বাই পয়েন্ট লিখে দিতে পারেন, মন্ত্রীর শ্যালকদের বা শ্যালক-সম্বন্ধীর ছেলেমেয়েদের কী কী আদব-কায়দা দেখাতে হবে? দেখলে কত লম্বা স্যালুট ঠুকতে হবে, মন্ত্রীর বিশেষ করে মন্ত্রীর স্ত্রী'দের আত্মীয়ের কাছে টিকিট দেখতে চাওয়া বিশেষ দুর্ব্যবহার হিসেবে বিবেচিত হবে, ইত্যাদি৷
আরও পড়ুন: খেলার মাঠ ‘দখল’ পুলিশের, প্রতিবাদ করায় কিশোর ও মা'কে আটক, ক্ষোভের মুখে ছাড়া হল
শুনুন, জনাব সুজন, এই ঘটনার একটি ব্যাখ্যা আপনি জাতির কাছে দেবেন৷ আশকথা পাশকথা না, স্পষ্ট করে বলবেন, বিনা টিকিটের ওই তিন যাত্রী আপনার আত্মীয় কিনা? আপনার এরকম আত্মীয়স্বজন আর কয়জন? এইসব আত্মীয়রা কি বিনামূল্যে ট্রেনে চড়বেন? এসি কামরাতেই যাতায়াত করবেন? টিটিইকে কী শাস্তি দেবেন বলে ভাবছেন?
আর একটা ছোট্ট কৌতূহল, শ্যালক ছেলেদের এসি কামরা থেকে বের করে জরিমানা যে করেছিলেন, সেই টিটিই বরখাস্ত হওয়ায় শ্বশুরবাড়িতে কি মাছের মুড়ো ডাবল পাচ্ছেন, নাকি পাবেন এরকম আশা দিয়ে রেখেছেন তাঁরা?
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি। লেখকের মত ব্যক্তিগত।)