নির্দেশ এসেছিল মোবাইলে। আর সেই নির্দেশ অনুসারেই তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে! এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনলেন ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৪ নিয়ে আলোচনার জন্য গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)-এর অন্যতম সদস্য তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায়-সহ অন্যরা।
উল্লেখ্য, শুক্রবার ওয়াকফ সংশোধনী বিলের জেপিসি বৈঠক চলাকালীন আবারও তুমুল অশান্তি হয়। এবং সেই অশান্তি জেরে কল্যাণ-সহ ১০ জন বিরোধী শিবিরের সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়। আর তারপরই জেপিসি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এই গুরুতর অভিযোগ আনেন কল্যাণ ও অন্যরা।
সাসপেন্ড হওয়ার পর লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লেখেন ওই বিরোধী সাংসদরা। সেই চিঠিতে তাঁরা উল্লেখ করেন, 'জেপিসি চেয়ারম্যান ফোনে কোনও একজনের সঙ্গে কথা বলেন। আর তারপরই তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়!'
লোকসভার অধ্যক্ষকে লেখা চিঠিতে আরও একাধিক বিষয় নিয়ে সংশয়, উদ্বেগ ও প্রবল বিরোধিতা প্রকাশ করেছেন বিরোধী শিবিরের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদরা।
তাঁদের অভিযোগ, জেপিসি চেয়ারম্যান একেবারেই একতরফাভাবে বৈঠক ও শুনানিগুলি পরিচালনা করছেন। তিনি মোটেও ন্য়ায্য ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন না।
সাংসদদের আরও অভিযোগ, জেপিসি-র বৈঠকের তারিখ যাতে পুনরায় স্থির করা হয়, চেয়ারম্যানকে বারবার সেই অনুরোধ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু, চেয়ারম্যান তা কানে তোলেননি। যে কারণে একেবারে 'শর্ট নোটিশ'-এ তাঁদের দিল্লি পৌঁছতে হয়। যার ফলে সাংসদদের নিজেদের এলাকায় আগে থেকে ঠিক করে রাখা একাধিক কর্মসূচি বাতিল করতে বাধ্য হন তাঁরা।
ওম বিড়লাকে পাঠানো চিঠিতে বিরোধী সাংসদের পক্ষ থেকে লেখা হয়েছে, 'যখন বেলা ১১টা নাগাদ জেপিসি-র বৈঠক শুরু হল, আমরা - বিরোধী সদস্যরা অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে আমাদের আওয়াজ তুলি। যেভাবে চেয়ারম্যানের দ্বারা জেপিসি পরিচালনা করা হচ্ছে, তার বিরোধিতা করি। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে একতরফা এবং অন্য়ায্যভাবে জেপিসি পরিচালনা করা হচ্ছে, আমরা তার প্রতিবাদ করি।...'
চিঠিতে বিরোধী সাংসদরা আরও লেখেন, 'আগামী ৩১ তারিখ থেকে সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা। তাই আমাদের নিজেদের রাজ্যে এবং এলাকায় একাধিক পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি রাখা হয়েছিল ২৭ থেকে ৩০ জানুয়ারির মধ্য়ে। কিন্তু, আমাদের নোটিশ দিয়ে জানানো হয় ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি জেপিসি বৈঠক হবে।'
সাংসদদের বক্তব্য, এই কারণেই তাঁরা জেপিসি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছিলেন, বৈঠক পিছিয়ে দিতে। কিন্তু, তিনি রাজি তো হননি, উপরন্তু ভদ্রভাবে বিরোধী সাংসদদের কথা শোনেননি পর্যন্ত!
বিরোধী সাংসদরা এরপরই লিখেছেন, 'আমরা গণতান্ত্রিকভাবেই এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু, ততক্ষণে চেয়ারম্যান ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলেন এবং তারপরই তিনি চেঁচিয়ে উঠে আমাদের সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেন।'
শুক্রবার যে বিরোধী সাংসদদের সাসপেন্ড করা হয়, সেই তালিকায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায় ছাড়াও রয়েছেন - মহম্মদ জাওয়েদ, এ রাজা, আসাদউদ্দিন ওয়েইসি, নাসির হুসেন, মোহিবুল্লাহ, অরবিন্দ সাওয়ান্ত, নাদিমুল এবং ইমরান মাসুদ।
যদিও জেপিসি চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পালের পালটা দাবি, বিরোধী সাংসদরা বৈঠক চলাকালীন তুমুল অশান্তি করছিলেন বলেই তাঁদের তিনি সাসপেন্ড ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন।