এখন জগন্নাথধামের রাজ্যে ঢুকে পড়েছে বিজেপি। তাই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে নবীন পট্টনায়েকের বিজেডি সরকার। হ্যাঁ, ওড়িশায় এখন বিজেপি সরকার এসেছে। তাই হেরে যেতে হয়েছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েককেও। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর দলের অনেক নেতাই খোঁচা দিয়ে বলেছেন, নবীন এখন প্রবীণ হয়েছে। সেইসব খোঁচা হাসি মুখেই হজম করেছেন বিজু জনতা দলের পোড়খাওয়া নেতা। তবে এবার নবীন পট্টনায়েক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মুখোমুখি হলেন বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ বাগের। যিনি কাঁটাবানজি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পরাজিত করেছিলেন নবীন পট্টনায়েকের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীকে।
নবীন পট্টনায়েক যে পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ সেটা আবার এই সাক্ষাতে বুঝিয়ে দিলেন। বিজেপি বিধায়কের সঙ্গে দেখা হলেও শুধু করজোড়ে নমস্কার করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন নবীন। কিন্তু ততক্ষণে প্রশ্ন করে বসেন বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ বাগ। নবীন পট্টনায়েককে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কেমন আছেন?’ এই প্রশ্নের যে এমন চতুর জবাব মিলবে তা ভাবতেও পারেননি লক্ষ্মণ। এই প্রশ্ন শুনে হাসি মুখে উত্তর দিলেন নবীন পট্টনায়েক, ‘ওহ, আপনি আমায় পরাজিত করেছেন।’ শুধু এই উত্তর আসতেই পিন পড়ার নীরবতা তৈরি হল সেখানে। কারণ এর পরের জবাব কি দেবেন তা ভেবে উঠতে পারছিলেন না বিজেপি বিধায়ক।
আরও পড়ুন: অসমে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে জনজীবন বিপর্যস্ত, একাধিক গ্রাম জলের তলায়, মৃত ৩০
ক্ষণিকের এই ধাক্কা সামলে উঠে বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ বাগ ইতিউতি চেয়ে দেখলেন। অনেকেই তখন হাসছিলেন। আসলে লক্ষ্মণ বাগও ভাবতে শুরু করেছিলেন সত্যিই তিনি নবীন পট্টনায়েককে হারিয়েছেন! সেই ক্ষমতা কি তাঁর আছে? নিজের কাছেই যেন বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল এই প্রশ্ন। তারপর সম্বিত ফিরে পেয়ে শান্ত গলায় জবাব দিলেন লক্ষ্মণ, ‘ভোটাররা গোটা নির্বাচনের প্রচার–পর্বে একেবারে নিশ্চুপ ছিলেন। কিন্তু তাঁরা আমাকেই ভোট দিয়েছেন।’ এই উত্তর যতক্ষণে লক্ষ্মণ বাগ দিলেন ততক্ষণে নবীন পট্টনায়েক বুঝিয়ে দিলেন বিজেপি হাওয়ায় তিনি হেরেছেন বটে, তবে সেটা ৪৮ বছরের লক্ষ্মণ বাগের কাছে নয়।
লক্ষ্মণ বাগ এখানে একটা মাধ্যম মাত্র। তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন ঠিকই এবং বিজেপির টিকিটে ও হাওয়ায় জিতেও গিয়েছেন। মানুষ তাঁকে ভোটও দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও তিনি কখনই নবীন পট্টনায়েকের সমকক্ষ হতে পারেননি। এই ঘটনা চলাকালীন তখন ওড়িশা বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি, তাঁর ডেপুটি কেভি সিং দেও এবং প্রভাতী পারিদা সকলেই উঠে নবীন পট্টনায়েককে স্বাগত জানালেন। কারণ গত ২৪ বছর ধরে অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নবীন পট্টনায়েক। এই পরাজয় নবীনের কাছেও অপ্রত্যাশিত।