২০২৫ সালের পদ্ম পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা করেছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, এ বছর পদ্মশ্রী পাচ্ছেন ১৩৩ জন, পদ্মভূষণ পাচ্ছেন ১৯ জন এবং পদ্মবিভূষণ পাচ্ছেন ৭ জন। রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি অনুষ্ঠানে তাদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। এবার পদ্মবিভূষণ পুরস্কারের তালিকায় নাম রয়েছে একজন জাপানি ব্যক্তির। তিনি হলেন ভারতে গাড়ি শিল্পের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং সুজুকি মোটর কর্পোরেশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ওসামু সুজুকি। তাঁকে মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: বিবেক দেবরায়, সুশীল মোদী সহ একাধিক ব্যক্তিত্ব মরণোত্তর পদ্মভূষণে ভূষিত, পদ্মবিভূষণের তালিকায় কারা?
ভারতে সাধারণ মানুষের চার চাকার গাড়ি চালানোর স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য যদি কোনও ব্যক্তির নাম নেওয়া যায় তবে তিনি হলেন ওসামু সুজুকি। ১৯৩০ সালে জাপানে জন্মগ্রহণ করেন ওসামু। তিনি শুধুমাত্র ভারতে গাড়ি শিল্পেরই প্রতিষ্ঠা করেননি বরং এর প্রসারও ঘটিয়েছিলেন। সুজুকি গত বছরের ডিসেম্বরে ৯৪ বছর বয়সে মারা যান। ভারতের মারুতি-৮০০ এর সফল যাত্রায় তাঁর অবদান এমন যে তা কখনও ভোলা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, তিনি ভারতে গাড়ি শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন।
১৯৮৩ সালে যখন এই গাড়ির উদ্বোধন করা হয়েছিল, তখন এটি শুধুমাত্র একটি গাড়ি ছিল না, বরং প্রতিটি ভারতীয় পরিবারের জন্য এটি একটি স্বপ্ন ছিল। সেই সময়ে ভারতে গাড়ির বাজার ছিল খুবই ছোট। তখন দেশে বছরে মাত্র ৪০ হাজারটি গাড়ি বিক্রি হত এবং প্রতি ১৪০০০ জনের মধ্যে মাত্র একজন ছিলেন গাড়ির মালিক। কিন্তু, ওসামু সুজুকি এই ছোট বাজারেও একটি বড় সুযোগ দেখেছিলেন।
জানা যায়, সরকারি কোম্পানি মারুতির (যেটি সঞ্জয় গান্ধীর প্রচেষ্টায় ১৯৭১ সালে গঠিত হয়েছিল) জন্য অংশীদার খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছিল। প্রথমে সুজুকি মোটর কর্পোরেশনের নাম উঠে আসেনি। কিন্তু, যখন রিপোর্ট প্রকাশিত হয় যে দাইহাতসু মারুতির সঙ্গে অংশীদারিত্ব করতে আগ্রহী তখন সুজুকি কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দাইহাতসু ভারতীয় কর্মকর্তাদের জাপানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এই প্রকল্পে কোম্পানির উপার্জনও বণ্টন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৮২ সালে ভারত সরকার এবং সুজুকির মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তারপর ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বরে মারুতি ৮০০ ভারতের রাস্তায় পথ চলা শুরু করে।
এই গাড়িটি জ্বালানিসাশ্রয়ী, দক্ষতা এবং স্থায়িত্বের মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছিল সেই সময়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিজেই প্রথম গ্রাহক হরপাল সিংয়ের হাতে মারুতি ৮০০-এর চাবি তুলে দিয়েছিলেন। ভারতীয় গাড়ি শিল্পের আধুনিকিকরণে ও শিল্পায়নে ওসামু সুজুকির গুরুত্বপূর্ণ অবাদানের কথা অস্বীকার করা যাবে না। এর আগে ভারত সরকার তাঁকে ২০০৭ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত করেছিল।