২০২০ সালের আগস্ট মাস। দিলবর-সহ মোট ১৭ জন শিশু কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ থেকে দিল্লিগামী ট্রেনের কামরায় ওঠে। মাঝপথে বিহারে বিষয়টা চোখে পড়ে কয়েকজন সমাজকর্মীর। সন্দেহ হওয়ায় পুলিশকে জানান তাঁরা। কিন্তু দিলবরদের নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের সেটা বুঝতে দেওয়া হয়নি। দিল্লি স্টেশনে ট্রেন ঢুকতেই ওদের উদ্ধার করেন পুলিশকর্মী ও এনজিও সদস্যরা। আটক করা হয় সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের।
তবে এটাই দিলবরের প্রথমবার দিল্লি যাত্রা নয়। এর আগেও দিল্লির এক সেলাই কারখানায় কাজ করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বছর ১১-র শিশুকে। করোনা লকডাউনের সময়ে তাকে কয়েকদিনের জন্য পশ্চিমবঙ্গে ফেরত আনা হয়। লকডাউন ওঠায় ফের তাকে কাজ করাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। 'আমার কাকা গত বছর আগস্টে আমার টিকিট কেটে দেন,' জানায় সে। আপাতত দিল্লির মুক্তি আশ্রমে থাকছে দিলবর ও তার বন্ধুরা। বাচান বাঁচাও আন্দোলন নামক এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোমে থাকে তারা। গ্রেফতার করা হয়েছে দিলবরের কাকাকে।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১-এর জুনের মধ্যে এভাবেই প্রায় ৯ হাজার শিশুকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। দিলবর-ও তাদেরই একজন। এমনই তথ্য দিয়েছে নোবেল শান্তি পুরষ্কারজয়ী সমাজকর্মী কৈলাস সত্যার্থীর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বাচান বাঁচাও আন্দোলন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু উদ্ধার হয়েছে উত্তরপ্রদেশ (৩,১৮৩ জন) থেকে। এরপরেই পর পর রয়েছে তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, রাজস্থান ও গুজরাটের নাম। প্রতিটি স্থানেই 'কাজের' উদ্দেশ্যে পাচার করে দেওয়া হয়েছে নাবালক-নাবালিকাদের।
জুন-জুলাইয়ে লকডাউন শিথিল হয়েছে দেশজুড়ে। এই সময় থেকেই আবারও শিশু পাচার বাড়বে, সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও। কিন্তু কেন?
ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পগুলি চাপে। ফলে লকডাউন ওঠার পর কাজ শুরু করার জন্য যথেষ্ট পুঁজি নেই তাদের। এদিকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক কর্মীর যা দৈনিক মজুরি, তাতে ৫-৬ জন শিশু শ্রমিককে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া যায়।
এদিকে ২০২০ সালে লকডাউনের সময়েও বহু পাচার হয়ে যাওয়া শিশু উদ্ধার হয়। এমনটাই জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাঁরা জানিয়েছেন, 'লকডাউনের পর বহু স্থানে কাজ, খাবার, আশ্রয় ও অভিভাবকহীন অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে বহু শিশু।'