দুই দিনে পাহাড় ও ভূমি ধসে কক্সবাজারের একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প-সহ দুই এলাকায় ১২ জন নিহত হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে এক পরিবারেরই পাঁচজন৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ধসের প্রধান কারণ পাহাড় কাটা ও বন উজাড় করা৷
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভূমি ধসের ঘটনায় মঙ্গলবার মারা গিয়েছেন ছ'জন৷ আর টেকনাফের হ্নিলা এলাকায় বুধবার মারা গিয়েছেন ৬ জন৷ তাদের মধ্যে একই পরিবারে পাঁচজন রয়েছেন৷ আরও ধসের আশঙ্কায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে৷ জেলা প্রশাসন এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলছে৷ সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে৷
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দোজা নয়ন বলেন, ‘প্রত্যেকটি ক্যাম্পেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘর আছে৷ আমরা ক্যাম্প ইনচার্জদের বলেছি তাদের সরিয়ে নিতে, অথবা নিজ উদ্যোগে সরে যেতে৷ পাহাড় কেটে বালুর ওপর ঘর তৈরি করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷’ তিনি বলেন, ‘টানা বৃষ্টির কারণে বালু সরে গিয়ে এই ধস হয়েছে৷’
টেকনাফের ধসও একই কারণে বলে জানা গিয়েছে৷ সেখানেও পাহাড় কেটে বসতি তৈরি করা হয়েছে৷ কক্সবাজার সেভ দ্য ন্যাচার অফ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ বলেন, ‘একসঙ্গে অনেক পাহাড় কেটে ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে৷ পাহাড় মাটি ধরে রাখতে৷ মাটি জল ধরে রাখতে৷ এখন পাহাড় ও মাটি কেটে বালুর উপর ঘর বানানো হয়েছে৷ ফলে বৃষ্টিতে বালু সরে গিয়ে ধস হচ্ছে৷ আর এখানে অনেক গভীর নলকুপ আছে৷ ফলে জলের স্তরও নেমে গেছে৷ শুধু বৃষ্টি নয়, এখানে এখন চোরাবলিও হয়েছে৷ হঠাৎ করে মাটি বসে যাচ্ছে৷’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পের বাইরে স্থানীয় প্রভাবশালীরাও পাহাড় ও মাটি কাটছে৷ গত কয়েক বছরে আমাদের হিসেবে ১০ হাজার একর পাহাড় ও বন উজাড় হয়েছে৷’
এর আগে ২০১০ সালের জুন মাসে প্রবল বৃষ্টি ও বন্যায় পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী গ্রামে পাহাড় ধসে পাঁচজন জন নিহত হন৷ ২০১১ সালের জুলাই মাসে থিমছড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে সাত জন নিহত হয়৷ ২০১২ সালের জুন মাসে ভালুকিয়া আমতলী চিকনঝিরি এলাকায় পাহাড় ধসে ১১ জন নিহত হন৷
এখন উখিয়া পাহাড়ের পাদদেশে ১৫ হাজারের বেশি পরিবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে বলে স্থানীয় সূত্রে ছবর৷ আর ঘরগুলো যে মাটিতে তৈরি তাতে ৭০ ভাগই বালু৷ পরিবেশ অধিদপ্তরও এই ঝুঁকি ও পাহাড় কাটার কথা স্বীকার করেছে৷ তারা জানায়, পরিস্থিতি যা তাতে আরো ধস হতে পারে৷ তবে অধিবাসীদের সরিয়ে নেওয়ার পর্যাপ্ত জায়গা এখন আর নেই৷ তাছাড়া মাইকিং করে সরে যেতে বললেও সেখান স্থানীয় বাসিন্দারা শোনেন না৷ স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে, ধস আর দলের উচ্চতা মিলে এখন পরিস্থিতি খুবই খারাপ৷ অনেকে জলবন্দি হয়ে পড়েছেন৷
কক্সবাজার জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শেখ মোহাম্মদ নাজমুল হুদা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য পাহাড় কেটে ক্যাম্প বানানোর পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালীরাও বছরের পর বছর পাহাড় কাটছে৷ আমরা সাধ্যমতো আইনি ব্যবস্থা নিয়েও তা বন্ধ করতে পারছি না৷ আমাদের লোক মাত্র তিনজন৷ গত কয়েক বছরে আমরা সাড়ে তিনশ'র মতো মামলা করেছি৷ গ্রেফতার করেছি৷ কিন্তু আমরা চলে আসার পরপরই আবার পাহাড় ও বনের গাছ কাটা শুরু হয়ে যায়৷ আমরা ঠেকাতে পারছি না৷’