৮ ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আমেরিকা। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ গণতান্ত্রিক ভোট প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে থাকে। কিন্তু এই ভোট পর্ব আদৌ সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে কিনা, তা নিয়েই সন্দেহ করে বসেছে আমেরিকা। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ পাকিস্তানে ৮ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে অনিয়মের দাবি তুলে নিরপেক্ষ তদন্তের পক্ষে ভোটও দিয়েছে।
এদিকে, প্রধান বিরোধী দল পিটিআই-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও অভিযোগ করেছিলেন যে পাকিস্তানের নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে এবং ভোট গণনায় অনিয়ম করে নওয়াজ শরিফের দল বিজয়ী হয়েছে। আর এমনই আবহে আমেরিকার এই পদক্ষেপে অনেকেই মনে করছেন যে, ইমরান খান এখন আমেরিকার সমর্থনও পাচ্ছেন।
পাক নির্বাচন নিয়ে মার্কিন পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস
প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস বুধবার পাকিস্তানে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের সমর্থনে একটি দ্বিদলীয় প্রস্তাব পাস করেছে। পাকিস্তানের ২০২৪ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। হাউসের ৮৫ শতাংশ সদস্য এই ভোটে অংশ নিয়ে, বিলের সমর্থনে ভোট দিয়েছেন।
প্রস্তাবে কী পেশ করা হয়েছিল
প্রস্তাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন বজায় রাখতে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। 'এক্সপ্রেসিং সাপোর্ট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস ইন পাকিস্তান' শিরোনামের রেজোলিউশনটি জর্জিয়ার কংগ্রেসম্যান ম্যাককরমিক এবং মিশিগানের কংগ্রেসম্যান কিল্ডি প্রবর্তন করেছেন।
পাকিস্তানের জনগণের পাশে আমেরিকা
একটি সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে রেজোলিউশনটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে বজায় রাখার এবং পাকিস্তানের জনগণের অধিকারকে সম্মান করার গুরুত্ব তুলে ধরে। কারণ তাঁরা এখন অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন।
এই সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়া প্রস্তাব, পাকিস্তান সরকারের কাছে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচন এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের সম্মান করার জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠিয়েছে।
পাক সরকারের প্রতিক্রিয়া
আমেরিকার প্রস্তাবে প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন পাকিস্তানের শাহবাজ শরীফ সরকার। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে যে দ্বিদলীয় প্রস্তাবটি দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অসম্পূর্ণ বোঝাপড়ার কারণে পাস হয়েছে। প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব সালমান বশির বলেছেন যে এটি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনও বাধা তৈরি করবে না। আমেরিকার নিরপেক্ষ তদন্তের প্রস্তাবটি দেশীয় আমেরিকান রাজনীতির বিষয় বলে অভিহিত করে তিনি বলেছেন, আমেরিকার জেলায় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ। তাই বশিরের দাবি, আমেরিকা মূলত নিজের নির্বাচনের জন্য এমনটা করেছে।
এদিকে, রেজোলিউশনের বিষয়ে পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালোচ নিশ্চিত করেছেন যে পাকিস্তান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংসদীয় গণতন্ত্র এবং সামগ্রিকভাবে পঞ্চম বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসাবে, তার জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাংবিধানিকতা, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ধরনের রেজুলেশনগুলি তাই গঠনমূলক বা উদ্দেশ্যমূলক নয়। আমরা আশা করি যে মার্কিন কংগ্রেস পাকিস্তান-মার্কিন সম্পর্ক জোরদার করার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমাদের জনগণ ও দেশ উভয়ের জন্যই উপকারি পারস্পরিক সহযোগিতার দিকে নজর দেবে।