পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে সংখ্যালঘু আহমাদি সম্প্রদায়ের ৮০ বছরের পুরনো একটি উপাসনালয় ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠল পুলিশ এবং একটি ইসলামি দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার লাহোর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে শিয়ালকোটের ডাসকা কালানে অবস্থিত এই উপসনালয় ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় তীব্র সমালোচনা জানিয়েছে দেশের সংখালঘু সম্প্রদায়।
আরও পড়ুন: ‘ডিলও নয়, ত্রাণও চাইব না’, দুর্নীতি মামলায় ১৪ বছরের কারাবাসের সাজা ইমরানের
‘জামাত-ই-আহমাদিয়া পাকিস্তান’ (জেএপি) এর মতে, স্থানীয় প্রশাসন ধর্মীয় চরমপন্থীদের চাপে আহমাদিদের এই উপাসনালয়টি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিয়েছে।জানা গিয়েছে, দেশভাগের আগে পাকিস্তান আন্দোলনের সদস্য এবং স্বাধীন দেশের প্রথম বিদেশমন্ত্রী স্যার জাফরুল্লাহ খান এই উপাসনালয়টি নির্মাণ করেছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, শুক্রবার রাতে কর্তৃপক্ষ এই জঘন্য অপরাধ করেছে। জেএপির অভিযোগ, এরফলে আহমাদিদের ধর্ম পালনের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। উপাসনালয়ে পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি জেএপির।
জানা গিয়েছে, উপাসনালয় ভাঙার সময় তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি)- এর সদস্যরা ধর্মীয় স্লোগান তুলেছিল। উল্লেখ্য, গত বছর আহমাদি সম্প্রদায়ের ২২টি উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
জেএপি এর তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, কর্তৃপক্ষের এই বিচারবহির্ভূত পদক্ষেপের জন্য পাকিস্তানের বদনাম হচ্ছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নিপীড়ন করার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ বার্তা পাঠাচ্ছে যে তারা পাকিস্তানের দুর্বল সম্প্রদায়ের বিষয়ে সামান্যতম চিন্তা করে না এবং সংখ্যালঘুরা এখানে নিরাপদ নয়। তাদের বক্তব্য, এটি বিচারবহির্ভূত পদক্ষেপ। ভবিষ্যতে এই ধরনের পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। দেশের সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে। তা সত্ত্বেও বার বার এই ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তাই এখন সময় এসেছে সরকারের উচিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানে গত বছরের সেপ্টেম্বরে পঞ্জাবের বিভিন্ন অংশে আহমাদি কবরস্থানগুলির ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। পুলিশ এবং টিএলপির সদস্যরা কবরের পাথরের উপর আঁকা পবিত্র শিলালিপি কালো করে দিয়েছিল। পাকিস্তানের আহমাদি সম্প্রদায়ের ওপর প্রায়ই হামলা চালানো হয়। যদিও তারা নিজেদেরকে মুসলিম মনে করে। তবে পাকিস্তানের সংসদ ১৯৭৪ সালে সম্প্রদায়টিকে অমুসলিম হিসাবে ঘোষণা করে। এছাড়াও তাদের ইসলামিক আচার অনুশীলন করতেও বাধা দেওয়া হয়েছিল। সংগঠনের অভিযোগ, ধর্মীয় চরমপন্থীরা পাকিস্তানে আহমাদিদের বিরুদ্ধে তাদের ঘৃণামূলক প্রচার বাড়াচ্ছে। যার ফলে কর্মক্ষেত্রে হয়রানি, চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং আহমাদি দোকানদারদের বয়কট করার জন্য জনসাধারণের আহ্বান জানাচ্ছে।