পাকিস্তান কোন পথে যাবে? তা আগামী রবিবার নির্ধারিত হবে। অনাস্থা ভোটে তিনি হেরে গেলে পাকিস্তান আবারও দাসত্ব, দুর্নীতির পথে এগিয়ে যাবে। তিনি জিতে গেলে ‘নয়া’ পাকিস্তান আরও শক্তিশালী হবে বলে দাবি করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইমরান কী বললেন?
- ইমরান: মীরজাফর এবং মীর সাদিক কারা ছিলেন? তিনি (মীরজাফর) ইংরেজের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলা দখল করেছিলেন। ইংরেজের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সিরাজদৌল্লাকে মেরে দিয়েছিলেন। নিজের স্বার্থের জন্য নিজের সম্প্রদায়ের মানুষকে পরাধীন করে তুলেছিলেন। অপরজন (মীর সাদিক) ইংরেজের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টিপু সুলতানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন।
- ইমরান: দেশকে নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। আমাদের যে সদস্যরা বিরোধীদের দিকে গিয়েছেন, তাঁদের বলছি যে আপনাদের উপর চিরকালের জন্য বিশ্বাসঘাতকের দাগ পড়ে যাবে।
- ইমরান অভিযোগ করেন, ২০-২৫ কোটি টাকা দিয়ে‘বিদ্রোহীদের’ কেনা হয়েছে। তাতে দেশের যুব সমাজের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।
- ইমরান: ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন, আমি তারপর আরও শক্তিশালী হয়ে সামন আসব। যাই ফলাফল হোক না। আমি চাই যে (রবিবার) আমার পুরো সম্প্রদায় দেখুক যে কারা দেশকে নিয়ে ব্যবসা করছেন।
- ইমরান: মানুষের সেবা করতে আমি রাজনীতিতে যোগ দিই। আমি ভাগ্যবান যে আল্লাহ আমায় খ্যাতি, অর্থ সবকিছু দিয়েছেন। আমি যখন রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলাম, তখন আমার তিনটি লক্ষ্য ছিল - বিচার সুনিশ্চিত করা, মনুষ্যত্ব এবং আত্মনির্ভরতা।
বৃহস্পতিবার সংসদে কী হয়েছে?
বৃহস্পতিবার অধিবেশনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিশেষ সহযোগী প্রস্তাব উত্থাপন করে সংসদ মুলতুবি করে দেওয়ার আর্জি জানান। যাতে সন্ধ্যা ছ'টা থেকে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের যাতে সেই কক্ষ ব্যবহার করা যায়। যদিও ভোটাভুটির মাধ্যমে সেই প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। তারপর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু করার অনুমতি দেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। 'গো ইমরান গো' স্লোগানের মধ্যে আজই অনাস্থা ভোটের দাবিতে অনড় থাকেন বিরোধীরা। কিন্তু বিরোধীদের মনোভাব নিযে প্রশ্ন তুলে রবিবার সকাল ১১ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়।
মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্টের ধাক্কা
এমনিতে ৩৪২ আসন বিশিষ্ট জাতীয় সংসদে ম্যাজিক ফিগার হল ১৭২। খাতায়কলমে ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সদস্য সংখ্যা ১৫৫। মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদ, বালোচিস্তান আওয়ামি পার্টি এবং গ্র্যান্ড ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের সদস্যদের মিলিয়ে জোট সরকারের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ১৭৯। তারইমধ্যে ২০ জনেরও বেশি সাংসদ শিবির বদল করেছেন। মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট ইমরানের সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ায় আরও চাপ বেড়েছে ইমরানের উপর। তাঁর সরকারের মন্ত্রী অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, শেষ বল পর্যন্ত খেলবেন ইমরান।
ক্ষমতা হারানোর শঙ্কার মধ্যেই বুধবার পাকিস্তানি সেনার প্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া এবং আইএসআইয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাভিদ অঞ্জুম সঙ্গে দেখা করেন। প্রায় দু'ঘণ্টা চলে সেই বৈঠক। ইসলামাবাদের অন্দরের খবর, প্রাথমিকভাবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখবে বলে জানালেও দিনকয়েক আগেই বড়সড় জনসভায় ভাষণ দেওয়ায় ইমরানকে জাতির উদ্দেশে ভাষণের পরিকল্পনা পিছিয়ে দিতে বলেছিল পাকিস্তানি সেনা। সেইমতো আজ ভাষণ দেন।