এই প্রথমবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা নীতি প্রকাশ্যে এসেছে গত শুক্রবার। আর ইসলামাবাদের নয়া নীতির বার্তা ঘিরে একাধিক জল্পনা তৈরি হয়েছে। নয়া পাক নিরাপত্তা নীতিতে শান্তির বার্তার ছড়াছড়ি রয়েছে! সেখানে ভারতের সঙ্গে আগামী ১০০ বছর শান্তি বজার রেখে চলার বার্তা দিয়েছে পাকিস্তান। প্রশ্ন উঠছে, এই বার্তা দিয়ে ইসলামাবাদ কি স্রেফ চায়ের কাপে ঝড় তুলছে, নাকি এর নেপথ্যে কোনও সুক্ষ্ম কূটনৈতিক ভাবনাচিন্তা রয়েছে? এক সংবাদমাধ্য়মকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের এক সরকারি আমলা দাবি করেছেন, ভারতের সঙ্গে ‘শত্রুতা’ চাইছে পাকিস্তান। আচমকা নিজের পুরনো নীতি থেক ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে ইমরান সরকারের এই বার্তা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে আলোচনা তুঙ্গে।
পাকিস্তান তার নিরাপত্তা নীতি প্রসঙ্গে জানিয়েছে, দেশের প্রতিটি প্রতিবেশীর সঙ্গে তারা শান্তি বজায় রাখতে চায়। সেই প্রতিবেশী দেশের তালিকাতে রয়েছে ভারতও। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক কূটনীতিকে আরও জোরালো করতেই এমন শান্তির পথে গিয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যেও জোর দেওয়ার কথা বলেছে ইসলামাবাদ। উল্লেখ্য, কাশ্মীর সমস্যার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ছাড়াই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশের ইঙ্গিত উঠে এসেছে ইমরানের প্রশাসনের এই নিরাপত্তা নীতি থেকে। ১০০ পাতার এই নীতির নথিতে ২০২২ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের পঞ্চবার্ষীকি পরিকল্পনার কথা বলা রয়েছে নিরাপত্তা ও দেশের সার্বিক উন্নতির মর্মে।
প্রসঙ্গত, এই জাতীয় নিরাপত্তা নীতিতে পাকিস্তান যেখানে বিনিয়োগ ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যর বার্তা দিচ্ছে ভারতকে, সেখানে জম্মু কাশ্মীর প্রসঙ্গে চূড়ান্ত সমাধানের দিকটি না থাকার ঘটনা, বহু কূটনৈতিক বিশ্লেষককে ভাবাচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালে ৫ অগাস্ট কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কে চরম অবনতি দেখা যায়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সাফ জানিয়ে ছিলেন, কাশ্মীর ইস্যুতে যতক্ষণ না ভারত নিজের অবস্থান বদল করবে, ততক্ষণ পাকিস্তান ওই দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করবে না। এরপর সেই জায়গা থেকে পাকিস্তান ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে। আর সেদেশের নিরাপত্তা নীতিতে ভারতের সঙ্গে শান্তি রেখে বাণিজ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই জায়গা থেকে প্রশ্ন উঠছে যে, পাকিস্তানের এই নীতি কি কেবলই একটি মুখোশ? নাকি নিজের কূটনৈতিক নীতিতে কোনও গূঢ় উদ্দেশ্য লুকিয়ে রেখেছে ইসলামাবাদ? উল্লেখ্য, এই নীতির খসড়া থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা নীতিতে স্পষ্ট ছাপ রয়েছে সেদেশের সেনা প্রধান জেনারেল বাজওয়ার। যিনি কয়েকদিন আগেই বলেছেন, পুরনো অধ্যায় ভুলে ভূ-আর্থিক পরিস্থিতিতে দুই দেশ (ভারত ও পাকিস্তান) এর একসঙ্গে আসা উচিত। তবে গোটা খসরায় কাশ্মীর ইস্যু সেভাবে গুরুত্ব না পাওয়ার ঘটনাও বেশ ভাবাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক মহলকে। ফলে ইসলামাবাদের বিদেশ নীতি নিয়ে জল্পনা চলছেই।