পোলিওমাইলাইটিস একটি পরিচিত রোগ। যেটাকে বিশ্ব চেনে পোলিও নামে। ১৯৫৫ সালে পোলিওভাইরাস ভ্যাকসিনের আসার আগে প্রত্যেক বছর বিপুল পরিমাণ মানুষকে পক্ষাঘাত করে দিত এবং মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকত। কিন্তু ২০০০ সালে মুখে ব্যাপক হারে পোলিও টিকা দেওয়ার জেরে কয়েকটি অঞ্চল ছাড়া বাকি গোটা বিশ্বে প্রায় পোলিও ভাইরাস নির্মূল হয়েছিল।
কিন্তু এবার এই আবহে একটি তাৎপর্যপূর্ণ খারাপ খবর এসে হাজির হয়েছে। আর সেটি হল, পাকিস্তানে এই রোগের ঘটনা আবার বাড়তে শুরু করেছে। ২০২৩ সালে নির্মূলের দ্বারপ্রান্তে থাকা সত্ত্বেও পোলিও ভাইরাসের ভয়াবহ রূপের মাত্র ৬টি কেস রিপোর্ট করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালে এই রোগের সংখ্যা ৭৩টিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এই উদ্বেগজনক প্রবণতা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। যাঁরা এই উদ্ভূত সমস্যার জন্য ইঙ্গিত করেছে আফগানিস্তানকে। এই রোগ বিস্তারে তাদেরই অবদান রয়েছে বলে বলা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: চিকিৎসকদের সময়ানুবর্তিতা নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করল স্বাস্থ্য দফতর, জোর সারপ্রাইজ ভিজিটে
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ মাস ধরে আফগানিস্তানে নিউমোনিয়া, ডেঙ্গি জ্বর এবং হামের মতো সংক্রামক রোগও বেড়ে চলেছে। এই বিষয়ে জুলফিকার ভুট্টো এই পোলিও যে অঞ্চলে হচ্ছে সেখানের শিশু টিকাদানের একজন বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ বলছেন যে, পাকিস্তানে ভয়াবহ পোলিওভাইরাসের জেনেটিক স্ট্রেনগুলি সবই আফগানিস্তান থেকে এসেছে। ডয়চে ভেলের একটি প্রতিবেদনে এই কথা তিনি বলেছেন। জুলফিকার ভুট্টো বলেন, ‘পাকিস্তানে পোলিও মামলার পুনরুত্থানের কারণ আফগানিস্তান থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া। এটি পাকিস্তানের সমস্ত জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা সাফল্যের মুখ থেকে পরাজিত হয়েছি। এটি একটি ভাইরাস যা সহজে নির্মূল হতে চায় না। তাই এটিকে নির্মূল করতে বহু সময় লাগবে।’
অন্যদিকে পোলিও নির্মূল করার প্রচেষ্টা হলেও মুখোমুখি চ্যালেঞ্জগুলি হয়ে দাঁড়িয়েছে বহুমুখী। জুলফিকার ভুট্টোর বক্তব্য, মহিলা স্বাস্থ্যের উপর তালিবানদের নিষেধাজ্ঞা, দুর্বল স্যানিটারি পরিস্থিতি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাহীনতা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর আফগানিস্তানে পোলিওভাইরাসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাব রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করে তুলছে। পাকিস্তান পোলিওভাইরাস টিকাদান কর্মসূচিতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, রোগ নির্মূলে দেশটির অগ্রগতি সমান হয়নি। নানা প্রদেশ জুড়ে টিকাদানের হার নানারকম। পঞ্জাবে ৮৫ শতাংশ শিশুকে টিকা দেওয়া হয়, আবার বালুচিস্তানের হার ৩০ শতাংশের নীচে। যতক্ষণ না সমানভাবে সমস্ত প্রদেশে ৮৫–৯০ শতাংশ টিকাদান হচ্ছে ততক্ষণ এটি নির্মূল করা সম্ভব নয়।