রেজাউল এইচ লস্কর এবং শিশির গুপ্ত
কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। শুধুমাত্র ইসলামিক দেশগুলির সংগঠনের (অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন বা ওআইসি) বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে একটি প্রস্তাবনা পাশ করা হয়েছে। তাতেই উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে পারল না পাকিস্তান। যদিও ভারতের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, সেই প্রস্তাবনা ‘তথ্যগতভাবে ভুল, ভিত্তিহীন এবং অযাচিত’।
‘হিন্দুস্তান টাইমস’ আগেই জানিয়েছিল, নাইজারের রাজধানী নিয়ামেতে বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকের কর্মসূচিতে কাশ্মীর ইস্যু রাখা হয়নি। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চ মুখ বাঁচাতে নিদেনপক্ষে একটি প্রস্তাবনা পাশ করার প্রস্তাব দেয় ইসলামাবাদ। শেষপর্যন্ত কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে প্রস্তাবনা পাশ হওয়ার বিষয়টিকে নিজেদের 'জয়' হিসেবে তুলে ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। সেদেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে টুইটারে দাবি করা হয়, নিয়ামের ঘোষণাপত্রে জম্মু ও কাশ্মীরের ‘বিতর্ক’-কে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে কাশ্মীর ইস্যুতে ‘লাগাতার সমর্থন করে যাচ্ছে’ ইসলামিক দেশগুলির সংগঠন।
পরে রবিবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা বরাবর স্পষ্ট করে দিয়েছি যে জম্মু ও কাশ্মীর-সহ ভারতের পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলিতে ইসলামিক দেশগুলির সংগঠনের হস্তক্ষেপ করার কোনও অধিকার নেই। যা ভারতের অবিচ্ছেদ্য এবং অপরিহার্য অংশ।’ পাকিস্তানের নাম না করে সাউথ ব্লকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘একটি নির্দিষ্ট দেশের মাধ্যমে যে ওআইসি ব্যবহৃত হচ্ছে, তা দুঃখজনক। যে দেশের ধর্মীয় সহনশীলতা, মৌলবাদ, সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন এবং ভারত-বিরোধী প্ররোচনায় দেওয়ার জঘন্য নিদর্শন আছে। ভবিষ্যতে এরকম বিষয়টি তুলে ধরা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা ওআইসিকে পরামর্শ দিচ্ছি। ’
বিষয়টির সঙ্গে অবহিত কূটনীতিবিদরা জানিয়েছেন, পাকিস্তানের জোরাজুরিতে ঘোষণাপত্রে কাশ্মীর ইস্যু রাখা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রাসঙ্গিক প্রস্তাবনা মোতাবেক জম্মু ও কাশ্মীর বিতর্কের শান্তিপূর্ণ মিটমাটের পক্ষে অবস্থান আছে ওআইসিয়ের।’ তবে নয়াদিল্লির কূটনীতিবিদরা জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে ইসলামিক দেশগুলির সংগঠনের ছাপোষা ঘোষণাপত্রে একেবারেই অবাক নন তাঁরা। বরং পাকিস্তানের লাগাতার চেষ্টা সত্ত্বেও কাশ্মীর ইস্যুতে বৈঠকে কোনও আলোচনা না হওয়ার বিষয়টিকে ভারতের জয় হিসেবেই দেখছেন তাঁরা।
এমনিতেই ৫৬ সদস্যবিশিষ্ট ওআইসির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য - সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কে চোনা পড়েছে। কাশ্মীর ইস্যুতে রিয়াধের অবস্থানের সমালোচনায় করায় ইমরানের সরকারকে ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ আগেভাগে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সৌদি আরব। ২০১৮ সালে ইসলামাবাদকে সেই ঋণ দিয়েছিল রিয়াধ।
সেই ধাক্কার পর তুরস্ক এবং মালয়েশিয়ার সঙ্গে ইসলামিক দেশগুলির নয়া জোট গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন ইমরান। কিন্তু তাতেও সফল হননি। তারইমধ্যে বুধবার নিরাপত্তাজনিত কারণে সাময়িকভাবে পাকিস্তান, আফিগানিস্তান-সহ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের ভিসা প্রদান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে পাকিস্তানের দাবি নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
একদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে দু'দেশের সম্পর্ক ধাক্কা খেয়েছে, সেই সময় গত বছর ধরে ক্রমাগত পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছে ভারত। তার ফলস্বরূপ ওআইসির বিদেশমন্ত্রীদের প্লেনারি সেশনে ‘গেস্ট অফ ইনার’ হিসেবে ডাকা হয়েছিল তত্কালীন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে। তা নিয়ে ফোঁস করেছিল পাকিস্তান।