বিজেপি বনাম তৃণমূল কংগ্রেস সবক্ষেত্রেই সংঘাত লেগে থাকে। সংসদ–বিধানসভা যুযুধান দু’পক্ষ। কিন্তু সংবিধান দিবসের দিনে মঙ্গলবার সংসদ ভবনেই এক সৌজন্যের মুহূর্ত দেখা গেল। আর সেখানে দু’পক্ষ হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি সভা–সমাবেশ থেকে শুরু করে সংসদ কক্ষে নরেন্দ্র মোদীর তুমুল সমালোচনা করে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীও বাংলায় পা রাখলে রাজ্য সরকারের ভুলত্রুটি এবং সরকার ফেলে বিজেপি সরকার স্থাপনের কথা বলে থাকেন। এমন দু’জনকে দেখা গেল, প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদের শরীর কেমন আছে খোঁজ নিলেন। খোঁজ নিলেন আঙুলেরও।
রাজনীতিতে সৌজন্য খুব কম দেখা যায়। বরং অশান্তি–সংঘাতই দেখা যায়। গত ২২ অক্টোবর ওয়াকফ বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে যায়। তমলুকের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুমুল তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন মেজাজ হারিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের আইনজীবী সাংসদ বোতল ভেঙে ফেলেন। বৈঠক চলাকালীন সামনে রাখা কাচের বোতল ভেঙে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটান কল্যাণ। ওই বোতলেরই ভাঙা টুকরো লেগে কেটে যায় তাঁর হাত। এই ঘটনার পর বেশ কয়েকদিন আঙুলে ব্যান্ডেজ বেঁধে ঘুরতে হয় কল্যাণকে।
আরও পড়ুন: ‘পাকিস্তানের মতো অন্ধকারে চলে যেতে পারে বাংলাদেশ’, সন্ন্যাসীর গ্রেফতার নিয়ে শঙ্কা ফিরহাদের
আবার একদিন আগেই দেখা যায়, ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে যে যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ে উঠেছে তার চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পালের সঙ্গে হেসে গল্প করছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সংবিধান দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সংসদে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তখন সেখানে মুখোমুখি হন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। প্রথমে হাসি, তারপর তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদের দিকে এগিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞালা করলেন, ‘অঙ্গুঠা ক্যায়সা হ্যায়?’ অর্থাৎ আপনার আঙুল কেমন আছে? প্রধানমন্ত্রী যে ওই ঘটনার খোঁজ রেখেছেন সেটা বুঝিয়ে দিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
প্রধানমন্ত্রী এমন সৌজন্য দেখে কল্যাণও পাল্টা সৌজন্য দেখিয়ে জবাব দেন, ‘এখন একদম ঠিক আছে। আপনি কেমন আছেন?’ প্রধানমন্ত্রীও জবাব দেন। রাজনৈতিক দিক থেকে বিপরীত মেরুর দুই মানুষের মধ্যে এমন সৌজন্য বিনিময় সত্যিই প্রশাংসার। বিরোধিতা থাকবেই। কিন্তু তার মাঝে সৌজন্য যেন অনুপস্থিত না হয়। এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে খুশি হয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এটাই তো সৌজন্য। একজন প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করছেন, আঙুল কেমন আছে। নিঃসন্দেহে ভাল লাগে। মন ছুঁয়ে যায়। এতদিন পরও ওঁর মনে আছে। দল যাইহোক না কেন, শাসক বিরোধী যাইহোক না কেন, একজন এমপি আমি। উনি যে আমার খোঁজ নিয়েছেন, এটা আমার কাছে বড় ব্যাপার। রাজনৈতিক সৌজন্যতার থেকে তো বড় কিছু হতে পারে না। আমার খবর নেওয়ায় আমি খুশি।’