লকডাউনে গুরুগ্রাম থেকে গয়ার বাড়িতে ফিরতে একহাতে সাইকেল চালিয়ে ৮ দিনে ১,৩০০ কিমি পাড়ি দিলেন আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত পরিযায়ী শ্রমিক।
মাত্র কিছু দিন আগে গুরুগ্রাম থেকেই আহত শ্রমিক বাবাকে সাইকেলের পিছনে বসিয়ে বিহারের দ্বারভাঙার বাড়িতে ফিরেছে বছর তেরোর জ্যোতি কুমারী। তার সাহসিকতা ও সংকল্পের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্পও। সরকারি আর্থিক সাহায্য পেয়েছে জ্যোতির পরিবার। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের দাক্ষিণ্য অথবা সরকারি আনুকূল্য, কোনওটাই জোটেনি গয়ার প্রাণপুরের আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাসিন্দা কমলেশ্বর যাদবের (২৮)।
বিহার সরকারের দেওয়া শংসাপত্রে তাঁর শরীরের ৪৫% যে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত, তা উল্লেখ করা আছে। করোনা সংক্রমণের জেরে দেশব্যাপী লকডাউন আরোপ করা হলে কাজ হারান গুরুগ্রামের মুদিখানা কর্মী কমলেশ্বর। এর পর গয়া থেকে ফোনে স্ত্রী খবর তাঁদের সদ্যোজাত ছেলের অসুস্থতার খবর দেওয়ার পরে স্থির থাকতে না পেরে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন এই পরিযায়ী শ্রমিক।
মাস-মাইনে ৮,০০০ টাকার মধ্যে ৩,০০০ দিয়ে বাড়িভাড়া মেটানোর পরে ধার-দেনা মেটাতে খরচ হয়ে যায় বাকি টাকার বেশিরভাগই। তার পর ৫০০ টাকায় পুরনো সাইকেল, পথে খাবার জন্য ২ কেজি ছাতু আর কেজিখানেক ছোলা ছাঁদায় বেঁধে বিহারে ফেরার সংকল্প করেন তিনি। ট্যাঁকে তখন তাঁর মাত্র ৫০০ টাকা পড়ে রয়েছে।
পক্ষাঘাতে ন্যুব্জ কমলেশ্বরকে অনেক বুঝিয়েও নিরস্ত করতে পারেননি পরিচিতরা। ৮ মে লজঝড়ে সাইকেল নিয়ে পথে নামেন ঘরমুখো পরিযায়ী। বাঁ হাতে সাড় নেই, সম্বল শুধু ডান হাত। সেই হাতে হ্যান্ডেল চেপে ধরে দিনে প্রায় ১৭০ কিমি পথ অতিক্রম করেন কমলেশ্বর।
অতিরিক্ত পরিশ্রমে সাংঘাতিক ফুলে ওঠে হাত, রাস্তায় বার দুয়েক উত্তর প্রদেশের পুলিশ বেত মারার পরেও তিনি থামেননি। সংক্রমণের আশঙ্কায় রাতের আশ্রয় দেয়নি কোনও গ্রাম। সড়কের পাশে খোলা আকাশের নীচে কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিয়ে ফের প্যাডেলে চাপ দিতে হয়েছে হতভাগ্য শ্রমিককে। বারাণসী থেকে গয়া, শেষ ২৫০ কিমি টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় খাবারও জোটেনি।
বহু কষ্টে গত ১৬ মে গয়া পৌঁছতে পেরেছেন কমলেশ্বর। শেরঘাঁটির সরকারি কলেজে তৈরি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ১৪ দিন কাটিয়ে অবশেষে বাড়ি ফিরেছেন তিনি।
এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী জনধন প্রকল্পে নিজের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি কমলেশ্বরের। গ্রামে মাত্র ৫ কাঠা জমি রয়েছে পরিবারের। এই অবস্থায় কী ভাবে সংসার খরচ জোগাড় করবেন, আপাতত সেই চিন্তাই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে পক্ষাঘাতগ্রস্ত কমলেশ্বরকে।
তাঁর দুর্দশার কথা জানতে পেরে শেরঘাঁটির মহকুমা শাসক অবশ্য বলেন, ‘যদি যথাযথ সূত্রে খবর পেতাম, তাহলে বিষয়টি যাচাই করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতাম। তাতে কিছু সাহায্য মিলত ওই পরিবারের।’