একলাফে লিটার পিছু জ্বালানির তিন টাকা শুল্ক বাড়িয়েছে কেন্দ্র। তারপরও টানা তিনদিন পড়ল পেট্রল ও ডিজেলের দাম।
গত ১৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে পেট্রল ও ডিজেলে বাড়তি শুল্ক চাপায় কেন্দ্র। লিটার পিছু বিশেষ উৎপাদন শুল্ক (এক্সাইজ ডিউটি) বেড়েছে দু’টাকা। একইসঙ্গে পেট্রল ও ডিজেলে লিটার পিছু এক টাকা সড়ক পরিকাঠামো সেস বাড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : প্রতি লিটার পেট্রল-ডিজেলে ৩ টাকা শুল্ক বৃদ্ধি কেন্দ্রের
তারপর টানা তিনদিন দাম পড়েছে পেট্রল-ডিজেলের। গত শুক্রবার কলকাতায় লিটার প্রতি পেট্রলের দাম ছিল ৭২.৭ টাকা। এক লিটার ডিজেল বিক্রি হয়েছে ৬৫.০৭ টাকায়। শনিবার প্রতি লিটারে পেট্রলের দাম পড়েছে ১৩ পয়সা ও ডিজেলের ক্ষেত্রে লিটার পিছু সেই পতনের পরিমাণ ১৬ পয়সা। রবিবারও কলকাতায় লিটার প্রতি পেট্রল ও ডিজেলের দাম কমেছে যথাক্রমে ১২ ও ১৮ পয়সা। সোমবারও সেই ধারা অব্যাহত। এদিন লিটার পিছু ১৬ পয়সা কমে পেট্রলের দাম দাঁড়িয়েছে ৭২.২৯ টাকা। অন্যদিকে, লিটারে ১৫ পয়সা দাম পড়ে ৬৪.৬২ টাকায় বিকোচ্ছে ডিজেল।
আরও পড়ুন : অপরিশোধিত তেল নিয়ে সৌদি-রাশিয়া রেশারেশি, ভারতে ৭১-এর নিচে পেট্রোল
তবে যে হারে দাম কমেছে তা নিয়েই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে বিরোধী দলগুলি। তাদের বক্তব্য, খাতায় কলমে তিনদিনে লিটারে ৫০ পয়সার মতো জ্বালানির দাম পড়েছে। অথচ সরকার বাড়তি শুল্ক বোঝা না চাপালে লিটার পিছু জ্বালানির দাম প্রায় তিন টাকা পড়ত। অথচ করোনাভাইরাস ও সৌদি আরব-রাশিয়ার রেষারেষিতে আন্তর্জাতিক বাজারে হু হু করে অপরিশোধিত তেলের দাম পড়েছে। হিসেব বলছে, গত ১০ মার্চ ব্যারেল পিছু অপরিশোধিত তেল কিনতে ভারতের খরচ হয়েছিল ২৫৫২.৫৬ টাকা। তার দু'দিন পর অর্থাৎ ১২ মার্চ সেই দাম আরও কমে দাঁড়ায় ২৩৯৬.৭৮ টাকা। ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর এত দাম কখনও কমেনি। সেদিন দিল্লিতে লিটার প্রতি পেট্রল ও ডিজেলের দাম ছিল যথাক্রমে ৫৯.৯৮ ও ৪৬.০৯ টাকা। আর সোমবার দিল্লির বাজারে লিটার পিছু পেট্রল ও ডিজেলের দাম যথাক্রমে ৬৯.৫৯ ও ৬২.২৯ টাকা।
আরও পড়ুন : করোনাভাইরাস ভীতি ও সৌদি-রাশিয়া সংঘাতের জেরে একলাফে নামল পেট্রোল-ডিজেলের দাম
তবে সেই সময়ের থেকে দামের এত ফারাক শুল্কের কারণেই। হিসেব অনুযায়ী, ২০১৪ মাসে মে'তে প্রতি লিটার পেট্রলে ৯.৮৪ টাকা শুল্ক ধার্য হত। যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২.৯৮ টাকা। ডিজেলের ক্ষেত্রেও ছবিটা এক। প্রথম দফায় নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার সময় এক লিটার ডিজেলে যেখানে ৩.৫৬ টাকা শুল্ক লাগু হত, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৮.৮৩ টাকা। বিরোধীদের অভিযোগ, এভাবে শুল্ক বাড়ানোর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও সুরাহা পায়নি আমজনতা। বরং লাভের গুড় পুরোটাই কেন্দ্রের কোষাগারে গিয়েছে। এবারও সেই নিয়মে ব্যতিক্রম হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।
আরও পড়ুন : পরামর্শ না শুনে পেট্রল-ডিজেলের শুল্ক বৃদ্ধি 'জিনিয়াস' মোদীর, বললেন রাহুল
যদিও শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে পালটা যুক্তি দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, বাড়তি শুল্কের আগামী অর্থবর্ষে বাড়তি ৩৯ হাজার কোটি টাকা আয় হবে সরকারের। ফলে এখন রাজকোষের হাঁসফাঁস যে অবস্থা চলছে, তা কিছুটা কাটবে। একইসঙ্গে পরিকাঠোমা ও উন্নয়নমূলক খাতে ব্যয় বাড়বে। ফলে আখেরে লাভ হবে আমজনতারই। নাম গোপন রাখার শর্তে এক সরকারি আধিকারিক বলেন, 'শুল্ক বৃদ্ধি সত্ত্বেও অপরিশোধিত তেলের দাম পড়ার সম্ভাবনা থাকায় পেট্রল-ডিজেলের দাম আরও পড়বে। জানিয়ে রাখি যে, চলতি বছরের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে লিটার প্রতি পেট্রল ও ডিজেলের দাম ছ'টাকার বেশি কমেছে।'