এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার মতো অস্থিরতার কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবুও গত শুক্রবার মাঝরাতে হঠাৎই পেট্রোপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয় এক লাফে। তবে যেভাবে একবারেই পেট্রোল ডিজেলের দাম ৩০-৪০ টাকা বাড়ানো হল তাতে এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশ ক্রমেই আর্থিক সংকটে নিমজ্জিত হচ্ছে। এমনটাই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
চলতি বছরের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার আর্থিক সংকটের আভাস পাওয়া গিয়েছিল জ্বালানির অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমেই। প্রথমদিকে গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকার সেভাবে বিষয়টায় পাত্তা দেয়নি। তখন তিনি ঋণ গ্রহণে ব্যস্ত। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটাই ভয়ানক আকার ধারণ করেছিল। গণপরিবহনের ভাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছিল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। তৈরি হয়েছিল জন বিক্ষোভ। প্রথমদিকে যখন এক ধাক্কায় পেট্রোলের দাম অনেকটা বাড়ানো হয় সেই দেশে তখন জানানো হয়েছিল যে স্রেফ লোকসান সামাল দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরে জানা গিয়েছিল আসল ছবিটা।
গত শুক্রবার মাঝরাত থেকে একবারে পেট্রোলের ৪৪ টাকা এবং ডিজেলের ৩৪ টাকা প্রতি লিটারে দাম বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রেও শ্রীলঙ্কার মতোই যুক্তি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের তরফে জানানো হয়েছে বিগত ছয়মাসে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। তাই সেটা সামলানোর জন্যই এভাবে পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ানো হল। আর এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে।
শেখ হাসিনার সরকারের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকার নিরুপায় হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে শুধু পেট্রোল ডিজেল নয়, অকটেন এবং কেরোসিনের দামও বাড়ানো হয়েছে। শ্রীলঙ্কা যেভাবে জ্বালানির ক্ষেত্রে "রেশনিং" এর ব্যবস্থা করেছিল বাংলাদেশও এখন সেই পথেই হাঁটছে।
শ্রীলঙ্কার ভরাডুবির নেপথ্যে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণকে দায়ী করেছিল অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণও গত পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ হচ্ছে ৯৩১২ কোটি ডলার! তারা যদি এখন এই ঋণ শোধ করতে যায় তাহলে বাজারে বিপুল পরিমাণে চাপ তৈরি হবে। ফলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা বাংলাদেশও ক্রমেই শ্রীলঙ্কার পথে এগোচ্ছে।