আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার পর থেকেই একাধিকবার বৈদ্যুতিন ত্রুটি ও প্রযুক্তিগত সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। এর জেরে সমস্ত বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানের উড়ান বন্ধ রেখে ত্রুটি খতিয়ে দেখার দাবি তুলল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান পাইলটস (এফআইপি)। এই দাবি জানিয়ে পাইলটদের সংগঠন অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রককে চিঠি লিখেছে। চিঠিতে সংগঠন ক্রমাগত বৈদ্যুতিক সমস্যা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের বিশেষ ‘ডিজিসিএ অডিট’ করানোর দাবিও জানিয়েছে।
পাইলট সংগঠনের অভিযোগ, ৯ অক্টোবর এয়ার ইন্ডিয়ার ভিয়েনা-দিল্লি ফ্লাইট এআই-১৫৪ মাঝ আকাশে একাধিক সিস্টেম বিকল হয়ে দুবাইয়ে জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়। তার আগে, ৪ অক্টোবর বার্মিংহামে নামার সময় এআই-১১৭ ফ্লাইটে ‘র্যাম এয়ার টারবাইন’ বা ‘ব়্যাট’ হঠাৎ সক্রিয় হয়ে পড়ে। সংগঠনের দাবি, এই দুটি ঘটনাই ইঙ্গিত দিচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার দিকে, যা তারা সরকারি সংস্থা 'এআইইএসইএল' থেকে নতুনভাবে নিয়োগ করা ইঞ্জিনিয়ারদের অক্ষমতার ফল বলে মনে করছে। সরকারকে লেখা চিঠিতে, এফআইপি এই দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেছে, ‘এগুলিতে বড় ধরনের কারিগরি সমস্যা ছিল যেখানে অটোপাইলট সিস্টেম হঠাৎ করে ব্যর্থ হয়ে একাধিক কারিগরি ত্রুটির সূত্রপাত ঘটায়। শুধু তাই নয়, বিমানটির অটোপাইলট, ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস), ফ্লাইট ডিরেক্টরস (এফডি) এবং অটোল্যান্ড সিস্টেমে সমস্যা ধরা পড়ে।
পাইলটদের সংস্থাটি এর আগে ১২ জুন আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমান এআই ১৭১-এর দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়ার বিষয়েও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানায়, যে দেশে বি-৭৮৭-এর ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান না করে বিমান ভ্রমণের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করা হচ্ছে। যেখানে আহমেদাবাদ থেকে উড়ান হওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিধ্বস্ত হয়ে ২৬০ জনের প্রাণ যায়। এদিনের চিঠিতে ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান পাইলটস স্পষ্ট জানিয়েছে, ‘আমরা আবারও মাননীয় মন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি যে এখনই এয়ার ইন্ডিয়ার সমস্ত বি-৭৮৭ বিমান বন্ধ করে দিন এবং এই বিমানগুলির বিশেষ করে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হোক। একই সঙ্গে ডিজিসিএ সমস্ত বি-৭৮৭ বিমানের একটি বিশেষ অডিট পরিচালনা করুক এবং এই বিমানগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হোক। কারণ দিন দিন ত্রুটিগুলি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বিমান সুরক্ষার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।’
এয়ার ইন্ডিয়ার প্রতিক্রিয়া
তবে এয়ার ইন্ডিয়া এই অভিযোগ সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে। সংস্থার মুখপাত্র জানিয়েছেন, এআই-১৫৪ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে একটি ‘টেকনিক্যাল ইস্যু’ দেখা দিয়েছিল, তবে তা বিদ্যুতের ত্রুটি নয়। বিমানটি দুবাইয়ে নিরাপদে নামে এবং যাত্রীদের একই বিমানে দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়। এআই-১১৭ ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও সংস্থা জানিয়েছে, বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করেছে। ‘ব়্যাট’ সক্রিয় হলেও বিদ্যুৎ ও হাইড্রোলিক সিস্টেমের সব পরিমাপ স্বাভাবিক ছিল। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, ‘ব়্যাট’-এর সক্রিয় হওয়া ছিল ‘আকস্মিক ও অনিয়ন্ত্রিত’, যা বিশ্বের অন্যান্য সংস্থার ক্ষেত্রেও ঘটেছে বলে বোয়িং আগেই জানিয়েছিল। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ঘটনাগুলির বিষয়ে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশনকে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে এবং তদন্ত সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সতর্কতা বজায় থাকবে।