উদ্দেশ্য দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের সামাজিক, শিক্ষাগত এবং অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে রিপোর্ট। ২০০৫ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বিচারপতি রাজেন্দর সাচারের সভাপতিত্বে সাচার কমিটি গঠন করেন। এবার সেই সাচার কমিটির বৈধতাকে প্রশ্ন করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হল।
কারা, কী প্রশ্ন তুলেছেন?
নীরজ শঙ্কর সাক্সেনার নেতৃত্বে পাঁচ ব্যক্তি এই প্রশ্ন তুলেছেন। সনাতন বৈদিক ধর্মের অনুগামী বলে দাবি নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন তাঁরা। দায়ের করা আর্জিতে বলা হয়েছে, '২০০৫ সালের ৯ ই মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি যে মন্ত্রিসভার পরামর্শ নিয়ে তবেই এই প্যানেল গঠিত হচ্ছে। সুতরাং, এটি স্পষ্ট যে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিজের ইচ্ছার ভিত্তিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত অবস্থান সম্পর্কে তদন্তের জন্য কমিটি নিয়োগ করার নির্দেশ দেন। অথচ, সংবিধানের ১৪ ও ১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য আলাদাভাবে আচরণ করা যাবে না।'
'এই ক্ষমতা আদতে কেবল রাষ্ট্রপতির রয়েছে। সংবিধানের ৩৪০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভারতের রাষ্ট্রপতির সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর পরিস্থিতি তদন্তের জন্য কমিশন নিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে,' এতে যোগ করা হয়েছে।
রিপোর্ট জমা
দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রাজেন্দ্র সাচারের নেতৃত্বাধীন কমিটি ২০০৬ সালের ১৭ নভেম্বর কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট জমা দেয়। তাতে মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য একাধিক পরামর্শ দেওয়া হয়। রিপোর্টে সরকারি চাকরিতে প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, মুসলমানদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক মান উন্নত করার সুপারিশ করা হয়।
আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর জৈনের মাধ্যমে দায়ের করা পিটিশনে বলা হয়েছে, 'সাচার কমিটি ভারতের সংবিধানের ৭৭ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করে। এটি অসাংবিধানিক এবং অবৈধ।' এই কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমান সরকার কোনও কাজ করলে তা স্থগিত করারও আর্জি করা হয়েছে পিটিশনে।
কেন এই পিটিশন?
এর আগে এই একই আবেদনকারীদের ফাইল করা অপর এক পিটিশনে জাতীয় সংখ্যালঘু আইন, ১৯৯২-এর সাংবিধানিক বৈধতা এবং তাদের জন্য কেন্দ্রের বিশেষ প্রকল্পগুলিকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল।
আবেদনে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে, ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে মুসলমানদের একটি বিশেষ শ্রেণী হিসেবে গণ্য করা যাবে না। কারণ এটি একইভাবে স্থাপিত হিন্দুদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে।
'মুসলিম সম্প্রদায় পরিবার পরিকল্পনায় বিশ্বাস করে না'
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলে দাবি করা আবেদনকারীরা মুসলমানদের সম্পর্কে 'কিছু ভুল ধারণা' ভাঙার কথা বলেন। 'কমিটি মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি অযথা অনুগ্রহ দেখিয়েছে। এটা তো মানতেই হবে যে মুসলিম সম্প্রদায় পরিবার পরিকল্পনায় বিশ্বাস করে না, তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী নয়। এগুলো বিবেচনাই করা হয়নি,' বলায় হয় আর্জিতে।
এই বিষয়ে, কেন্দ্র একটি হলফনামায় জানিয়েছিল, সাচার কমিটির রিপোর্ট মেনেই এই বিশেষ স্কিমের আয়োজন করা হয়েছিল। এরপরেই আবেদনকারীরা প্রায় ১৫ বছর পর সাচার কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নেন।