দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। আজ অর্থাৎ বুধবার বিকেলে নবি মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে এদিন বিমানবন্দরের প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন হল। নবি মুম্বই বিমানবন্দরটি উদ্বোধন হওয়ায় বাণিজ্য নগরীর ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উপর চাপ অনেকটাই কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পশ্চিম ভারতের বিমান চলাচলের মানচিত্রেরও অনেকটাই বদল ঘটবে বলে আশা করছেন অনেকে।
আন্তর্জাতিক মাইল ফলকের এক অন্যতম দিশারী হয়ে উঠবে নবি মুম্বই বিমানবন্দর। এই প্রকল্পটি ভারতের বৃহত্তম গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর প্রকল্প, যা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলের অধীনে নির্মিত হয়েছে। ১৯,৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই বিমানবন্দরটি থেকে বাণিজ্যিকভাবে উড়ান চালু হয়ে যাবে ডিসেম্বরের মধ্যে। তবে অক্টোবর মাসের মধ্যেই এই বিমানবন্দরে ডোমেস্টিক ও ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট চালু হতে পারে বলে খবর। লন্ডন, নিউইয়র্ক এবং টোকিওর পর একাধিক বিমানবন্দর বিশিষ্ট শহর হিসেবে নাম লেখাতে চলেছে নবি মুম্বই। নবি মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উদ্বোধন ছাড়াও একদিন মুম্বই মেট্রো লাইন-৩-এর নতুন ধাপ চালু এবং ‘মুম্বই ওয়ান’ মোবিলিটি অ্যাপের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
নবি মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
নবি মুম্বই হল দেশের প্রথম সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল বিমানবন্দর। যেখানে ডিজিটালি প্রি-বুকিং গাড়ি পার্কিং স্লট থাকবে। একই সঙ্গে অনলাইন ব্যাগেজ ড্রপ ও অভিবাসন পরিষেবাও ডিজিটালি হবে। এটি একটি সম্পূর্ণ অটোমেটেড, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যুক্ত বিমানবন্দর।
এই বিমানবন্দর বছরে প্রায় ২ কোটি যাত্রী চলাচলের উপযুক্ত করে গড়া হয়েছে। একটি রানওয়ে দিয়েই প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করবে। সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর বছরে ১৫.৫ কোটি যাত্রী চলাচলের উপযুক্ত হয়ে যাবে। তখন চারটি টার্মিনাল ও ২টি রানওয়ে কাজ শুরু করবে।
বিশেষত্বের মধ্যে অন্যতম-এটি দেশের প্রথম বিমানবন্দর যা এক্সপ্রেসওয়ে, হাইওয়ে এবং মেট্রো, তিন ধরনের পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকবে। অক্টোবরের শেষ নাগাদ টিকিট বিক্রি শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে বিমান চলাচল শুরু হবে।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ৮ থেকে ১০টি ফ্লাইট চালু থাকবে এই বিমানবন্দরে। যাত্রী চাহিদা বৃদ্ধি পেলে এই ফ্লাইটগুলি প্রতি ঘন্টায় ২০ থেকে ৩০টি পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
বিমানবন্দরে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে-৪৭ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা, টেকসই এভিয়েশন ফুয়েলের জন্য স্টোরেজ, এবং বৈদ্যুতিক বাস পরিষেবা। উল্লেখযোগ্যভাবে, এটি হবে ভারতের প্রথম বিমানবন্দর, যেখানে জলপথে (ওয়াটার ট্যাক্সি) যাত্রী আগমন ও গমন সম্ভব হবে।
এই এয়ারপোর্টের বার্ষিক কার্গো ক্যাপাসিটি হবে ৩২.৫ লক্ষ মেট্রিক টন। আগামিদিনে এই এয়ারপোর্ট এশিয়ার বৃহত্তম অ্যাভিয়েশন হাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
প্রথম পর্যায়ে ইন্ডিগো, আকাসা এয়ার এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস এই বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিমানবন্দর চালু হলে মুম্বই ও পশ্চিম ভারতের বিমান চলাচল ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসবে এবং যাত্রীদের জন্য এটি হবে এক বিশ্বমানের অভিজ্ঞতা।