কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন তথা রাজ্যসভার সাংসদ সোনিয়া গান্ধী নিট-ইউজি প্রশ্নপত্র ফাঁস বা মণিপুরের জাতিগত হিংসার মতো ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি বলেন মোদী ‘ঐকমত্যের মূল্য’ সম্পর্কে প্রচার করলেও ‘সংঘাতকে মূল্যবান’ বলে মনে করেন।
দ্য হিন্দুর সম্পাদকীয় এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। সেখানে সোনিয়া দাবি করেছেন, নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় মেয়াদ নির্বাচনী ফলাফলের অংশ নয় কারণ এটি প্রমাণ করার মতো কোনও প্রমাণ নেই। প্রধানমন্ত্রী এমনভাবে কথা বলছেন যেন কিছুই বদলায়নি। তিনি ঐকমত্যের মূল্য প্রচার করেন কিন্তু সংঘাতকে মূল্য দিয়ে চলেছেন।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনে ডেপুটি স্পিকার পদ এবং নিট ইস্যুতে কেন্দ্রের মধ্যে ঘন ঘন সংঘর্ষ ও তীব্র বাক্যবাণ বিনিময়ের জন্য কেন্দ্রের সমালোচনা করেন রাজ্যসভার সাংসদ।
তিনি বলেন, 'অষ্টাদশ লোকসভার প্রথম কয়েকদিন দুঃখজনকভাবে উৎসাহব্যঞ্জক ছিল না। …সপ্তদশ লোকসভায় ডেপুটি স্পিকারের সাংবিধানিক পদ পূরণ না করা শাসকগোষ্ঠী এই সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত অনুরোধকে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেছে।
২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এনডিএ-র প্রথম মেয়াদে, এআইএডিএমকে-র এম থাম্বিদুরাই লোকসভার ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যদিও পদটি ২০১৯-২০২৪ সালের মধ্যে শূন্য ছিল।
নিট পেপার ফাঁস মামলায় প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সোনিয়া বলেন, এই ঘটনা লক্ষ লক্ষ উচ্চাকাঙ্ক্ষী পড়ুয়ার জীবনে বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
তিনি বলেন, 'যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর 'পরীক্ষা পে চর্চা' করেন, তিনি দেশজুড়ে বহু পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়া প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে স্পষ্টতই নীরব রয়েছেন।
প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি ১৯৭৫ সালের জুনে তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেস সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে জরুরি অবস্থা জারি করার জন্য বিজেপিকে আক্রমণ করেছিলেন। গান্ধী বলেছিলেন যে এনডিএ সরকার সংবিধানের উপর আক্রমণ থেকে নজর ঘোরাতে বিষয়টি টেনে এনেছে।
তিনি বলেন, 'এটা ইতিহাসের সত্য যে ১৯৭৭ সালের মার্চ মাসে আমাদের দেশের মানুষ জরুরি অবস্থার বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট রায় দিয়েছিলেন, যা দ্বিধাহীনভাবে এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে গৃহীত হয়েছিল। তিন বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৭৭ সালের মার্চে যে দল নতজানু হয়েছিল, সেই দল ক্ষমতায় ফিরে এসেছিল এমন সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যেটা মোদী ও তাঁর দল কখনও অর্জন করতে পারেনি, এটিও সেই ইতিহাসের অংশ।
সোনিয়া আরও বলেন, এটা 'আশ্চর্যজনক' যে লোকসভার অধ্যক্ষও এই প্রসঙ্গ তুলেছেন, ‘যাঁর অবস্থান কঠোর নিরপেক্ষতা ছাড়া অন্য কোনও রাজনৈতিক রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’।
এদিকে সংসদের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করে এটিকে 'অন্ধকারতম অধ্যায়' এবং ‘সংবিধানের উপর সরাসরি আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
২০২৩ সালের মে মাসে মণিপুর রাজ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে সাম্প্রদায়িক হিংসা কবলিত মণিপুর নিয়ে নীরব থাকা এবং সেখানে না যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আক্রমণ করেন সোনিয়া।
সবচেয়ে স্পর্শকাতর এই রাজ্যে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে যাওয়ার সময় বা ইচ্ছে বা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে দেখা করার সময় বা আগ্রহ খুঁজে পাননি। বলেছেন সোনিয়া গান্ধী।